ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মোগল স্থাপত্য নিদর্শন মির্জাপুর শাহী মসজিদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০৯ এএম  (ভিজিট : ৮০)
মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম এক নিদর্শন মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। আনুমানিক সাড়ে তিনশ বছরের আগে স্থাপিত মসজিদটির নির্মাণশৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য এখনও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। নানা ইসলামি টেরাকোটা, ফুল ও লতাপাতার কারুকার্য খোদাই করা রয়েছে মসজিদটির দেয়ালজুড়ে। সম্মুখভাগে আয়তাকার টেরাকোটার কারুকার্যগুলো একটির সঙ্গে অপরটির মিল নেই। দেয়ালে ব্যবহার করা ইটগুলো চিকন, রক্তবর্ণ ও বিভিন্নভাবে অলঙ্কৃত।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট এবং একই সারিতে রয়েছে ৩টি গম্বুজ। গম্বুজের চার কোনায় রয়েছে চারটি মিনার। সামনে রয়েছে তিনটি দরজা। সদর দরজা ও মাঝের গম্বুজের সামনের দিকে দুইপাশে রয়েছে দুটি ছোট মিনার। ভেতরের অংশে খোদাই করা ফুল, লতাপাতা, কুরআনের আয়াতসংবলিত ক্যালিগ্রাফি তুলির ছোঁয়ায় সুসজ্জিত। এসব খোদাই করা কারুকার্য বিভিন্ন রঙে বিভিন্নভাবে সাজানো। এর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইবাদতে মশগুল ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায়। এ ধরনের কারুকার্য মণ্ডিত নকশা ইরানের মসজিদ ও প্রাচীন অট্টালিকার মাঝে বিদ্যমান রয়েছে।

মসজিদের সামনে একটি খোলা জায়গা রয়েছে। খোলা জায়গার এক পাশে রয়েছে সুসজ্জিত পাকা তোরণ। তোরণের উভয় পাশে রয়েছে আকর্ষণীয় নকশা ও খাঁজ করা স্তম্ভ। স্তম্ভের মাঝে চ্যাপ্টা গম্বুজ তোরণকে অনিন্দ্য রূপ দিয়েছে। সুসজ্জিত গম্বুজের ওপরে ক্ষুদ্র আকৃতির চূড়া তোরণটিকে ষোলোকলা রূপ দিয়েছে। মসজিদটির পাশেই রয়েছে একটি নুরানি মাদরাসা। সামনের দিকে প্রাচীন আমলের একটি অব্যবহৃত কূপ। এ ছাড়া তোরণের সামনের দিকে রয়েছে একটি পুকুর। যেখানে শিশু-কিশোরসহ এলাকাবাসী গোসল করতে পারে।

মসজিদটির নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা ইতিহাস। স্থানীয়রা মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন। দোস্ত মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী, মোগল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে (১৬৫৬ সাল) মসজিদটি নির্মাণ শুরু হয়। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে।

ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী মোগল সম্রাট শাহ সুজার রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। কেউ মনে করেন মোগল শাহজাদা আজমের সময়কালে (১৬৭৯ সাল) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের মসজিদের সঙ্গে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। সেই সময়েই মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এলাকাবাসীরা জানান, মসজিদটি নির্মাণের দীর্ঘ প্রায় ৩৬৫ বছর পার হলেও কোথাও উল্লেখযোগ্য ত্রুটি চোখে পড়েনি। একসময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। তখন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মালিক উদ্দিন মসজিদটি সংস্কারের জন্য ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন। তখন থেকে আর সংস্কার হয়নি। বর্তমানে মসজিদটির দেয়ালে ও গম্বুজে কিছুটা ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারাও অল্প অল্প খসে পড়েছে। ঐতিহাসিক মসজিদটি পরিদর্শনে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় জমে।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close