ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

যানজট-জলজটে একাকার ঢাকার রাজপথ, ভোগান্তি চরমে
বৃষ্টিপাত কমে বাড়তে পারে তাপমাত্রা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৪৯ পিএম  (ভিজিট : ১৩৬)
কখনো মুষলধারে আবার কখনো ঝিরিঝিরি করে গগণ চিরে ঝরছে আশ্বিনের বৃষ্টি। রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশেরই একই অবস্থা। এ যেন শরতের শেষাংশে এসে দেখা মিলছে বর্ষার চিত্র।  

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্নসড়ক ও অলিগলিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আবার  কোথাও কোথাও দেখা গেছে তীব্র যানজট। আর এই সুযোগে রিকশা-সিএনজিগুলোতে বাড়তি ভাড়া হাঁকতে দেখা গেছে। যানজট-জলজটে ঢাকার বিভিন্ন পথে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েন চরম বিপাকে।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অফিস বলছে, থেমে থেমে এমন বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গণমাধ্যমে বলেন, আজ শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে  তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এই বৃষ্টির প্রায় পুরোটাই হয়েছে সকাল ৯টার পর। এর আগের তিন ঘণ্টায় ঢাকায় মাত্র দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, গুলশান মহাখালী, সাতরাস্তা, মালিবাগ, মৌচাক, পল্টন ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে অফিসে যাওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে।

পল্টন এলাকায় এনামুল হোসেন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবি বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি, বাসেই উঠতে পারছিলাম না। ঠাসাঠাসি করে খুব ভোগান্তি নিয়ে অফিসে এলাম।

নূরুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ভেবেছেলাম বৃষ্টি হবে না। তাই ছাতা আনিনি। কিন্তু রাস্তায় বের হওয়ার পরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হলো।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা। বাস কম, জলাবদ্ধতা, যানজট এই সুযোগে রিকশা, সিএনজিওয়ালারা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন।

দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়কে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, বাড্ডা, বনানী, ফার্মগেট, শাহাবাগ, নিউমার্কেট, মিরপুর রোডেও যানজটের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও অতিবৃষ্টির কারণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,  সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি এখন পর্যন্ত অনবরত পড়ছে। সংস্কার কাজ চলা সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল মেট্রো রেলের কাজ চলায় বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা ও যানজট দেখা  দেয়। সেখানে অতিরিক্ত ফোর্স নিযুক্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে বেগ পেতে হচ্ছে ট্রাফিক সদস্যদের।
কাকরাইল মোরে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের এক চালক  জানান, বৃষ্টির কারণে যাত্রী কমলেও যানজট বেড়েছে। অন্য দিনগুলোর চেয়ে আজ বেশি সময় লাগছে গন্তব্য পৌঁছাতে।

সিএনজি চালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সিএনজি এক ঘণ্টা ধরে কাকরাইল মোড়ে পড়ে আছে। বৃষ্টি কমলে এটাকে টেনে গ্যারেজে নিতে হবে। ইনকাম তো দূরের কথা আজ লোকসান গুনতে হবে দ্বিগুণ।
তবে রিকশাওয়ালাদের দিন ছিল ভালো। তারা বলছেন, বৃষ্টিতে খ্যাপ কম, ইনকাম বেশি। তবে বৃষ্টির কারণে সারাদিনই ভিজতে হলো। এতে জ্বর হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে, বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। অনেক স্কুলের সামনে পানি জমে যাওয়ায় তাদের ভ্যানে করে পার হতে দেখা গেছে।

শুক্রবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইনঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

আর শনিবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। ওই দিনও সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে, শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় হয়েছে। যে কারণে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, বরিশাল, পাটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর (পুন.) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

তবে সমুদ্র বন্দরগুলোকে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close