ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

চীনা চিকিৎসক দলের হাসপাতাল পরিদর্শন
সহায়তা নিয়ে ধারণা নেই কারও
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:০৪ এএম আপডেট: ২৬.০৯.২০২৪ ৮:০৫ এএম  (ভিজিট : ২৬৯)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে রাজধানীর ৫টি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন চীন থেকে বাংলাদেশে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় চীনা চিকিৎসক দল অনেক রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এখনও রোগী কিংবা স্বজনরা জানেন না, তাদের কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে কিংবা কী ধরনের সহায়তা করা হবে। অথবা কীভাবে সহায়তা করা হবে। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও অজানা রয়ে গেছে। বুধবার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে একাধিক রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে চীনা চিকিৎসক দল আহত রোগীদের চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু জটিল রোগীর ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি লাগবে বলে দলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। প্রয়োজনে আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। আবার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চীনে নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানিয়েছে চীনা বিশেষজ্ঞরা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার চিকিৎসক দল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেবে। তারপরই বিস্তারিত জানা যাবে। কতজনকে চিকিৎসার সহায়তা দেওয়া কিংবা কতজনকে চীনে নেওয়া হবে।

চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমে সাধারণ সার্জারি, ট্রমা কেয়ার, অর্থোপেডিকস, পুনর্বাসন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও চক্ষু চিকিৎসায় বিশেষায়িত চিকিৎসকরা রয়েছেন। এ দলের নেতৃত্বে আছেন চীনা চিকিৎসক ডং কুইআন।

জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসেন ১০ সদস্যের চীনা বিশেষজ্ঞ দল। মেডিকেল টিমের এই সদস্যরা ইতিমধ্যে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছাত্রসহ অন্যদের চিকিৎসাসেবার খোঁজখবর নেন। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে অংশ নেওয়া চীনের মেডিকেল টিমের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ, আন্দোলনে আহত রোগীদের সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন চীনা চিকিৎসক দল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি ২৯ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ২৪ জন রোগীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন চীনা প্রতিনিধি দল। এ সময় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও তথ্য নেন তারা।

বুধবার সরেজমিন হাসপাতালে আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদেরই একজন চক্ষু হাসপাতালের চার তলায় ভর্তি শামীম হাওলাদার। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভর্তি রয়েছেন। এর আগেই দুবার ভর্তি ছিলেন।

তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৭ জুলাই মিরপুর-২ এলাকায় পুলিশের শত শত ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে কয়েকটি গুলি চোখ, মাথা, হাত-পা, পেটে লাগে। চক্ষু হাসপাতালে দুই দফা অপারেশন করার পর বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ডান চোখেও ঝাপসা দেখেন। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর চীনা চিকিৎসক দল তার সেই চোখে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার করেছেন বলেও জানান শামীম। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ওই ডাক্তাররা আমার কাগজপত্র দেখেছেন এবং চোখ পরীক্ষা করেছেন। তখন আমাদের দেশের অনেক ডাক্তাররাও ছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু আমাদের কেউ কিছু বলেননি। আর চীনা দল কীভাবে আমাদের সহায়তার করবে বা আদৌ কী করবে কি না তার কিছুই আমাদের জানানো হয়নি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

এক চোখ হারানো আরেক রোগী রাসেল রানা। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। গত ২০ আগস্ট তিনি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তিন দফা অপারেশনের পর তার বাম চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। ডান চোখের দূরের কোনো জিনিস দেখতে পান না। সবশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এখানে ভর্তি হন। তাকেও চীনের চিকিৎসক দল বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বলেও জানান রাসেল। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে চীনের প্রতিনিধি দল আমার চোখ কয়েকবার দেখেছে এবং কাগজপত্র দেখেছেন। তারপরে চলে গেছেন। এখন কী দেখেছেন বা কী জন্য দেখেছেন তার ব্যাপারে আপডেট কিছুই জানি না।

এ ব্যাপারে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, চীনের বিশেষজ্ঞ দল আমাদের এখানে আন্দোলনে আহত হয়ে ভর্তি হওয়া ২৪ জন রোগীর চোখের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তবে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখে ওই প্রতিনিধি দল খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, আহতদের চোখে যে ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এর বেশি কিছু আর করণীয় নেই।

গুরুতর চোখের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চীনে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে-এ ধরনের কোনো তালিকা করার বিষয়ে প্রশ্ন করা করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো তালিকা করা হয়নি এবং এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা মন্ত্রণালয় থেকেও কিছু জানানো হয়নি বলেও জানান এই পরিচালক।

পঙ্গু হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চার তলায় ভর্তি মো. শাকিল খান। তিনি গত ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় এলাকায় আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। এরপর থেকেই এই হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। তার বাম হাতজুড়ে এখনও ব্যান্ডেজ ও অবশ রয়েছে।

চীনের প্রতিনিধি দল তার কাছে কী জানতে চেয়েছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে শাকিল বলেন, আমার কাছে এসে প্রথমে কাগজপত্র দেখেছে। পরে হাত নড়াচড়া করতে বলেছে। এ ছাড়া আর কিছুই বলেনি। পরে তারা চলে গেছে। আর আমাদের এখানকার ডাক্তাররাও তেমন কিছুই জানায়নি আমাকে।

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের ইয়োলো-১ ইউনিট প্রধান এবং অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সময়ের আলোকে বলেন, চীনের প্রতিনিধি দল আমাদের এখানে আন্দোলনে আহত হয়ে ভর্তি হওয়া ২৪-২৫ জন রোগীকে দেখেছেন, আহত রোগীদের কী ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেওয়া ঠিক আছে কি না এবং কীভাবে কী ধরনের আহত হয়েছেন সেই বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন। এ ছাড়াও কীভাবে আরও ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল বাংলাদেশে আসা এবং সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সময়ের আলোকে বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে আন্দোলনে আহত হয়ে ভর্তি হওয়া বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। তারা রোগীদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও উন্নতির বিষয়গুলো দেখছেন। এমনকি তারা হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধাও দেখেছেন। সব বিষয়ে আজ বেলা ১১টায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন। সেই প্রতিবেদনেই বিস্তারিত সবকিছু থাকবে। তারা কীভাবে রোগীদের সহায়তা করবেন এবং কতজন রোগীদের চীন নিয়ে চিকিৎসা করাবেন-এই মুহূর্তে সবকিছু বলা যাবে না।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close