ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকার
ইউরোপেরও পূর্ণ সমর্থন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:১৩ এএম  (ভিজিট : ১৮৪)
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ওই সময়েই সমর্থন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এরপর চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নেতারা তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন পুনরায় প্রকাশ করেন। বিশ্বনেতারা বলেছেন যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নেওয়া সংস্কার কর্মসূচিতে তাদের সমর্থন  এবং সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করেন। বৈঠকটি সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে অনন্য। কারণ নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না কিন্তু অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করেন। বৈঠকে ড. ইউনূসকে জো বাইডেন যেভাবে বুকে জড়িয়ে ধরেন তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক ও ইউএনইউচসিআরের প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডিসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের মঞ্চেও বক্তব্য দিয়েছেন ড. ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিজেও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বুধবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দার লিয়েনের সঙ্গে অধ্যাপক ড. ইউনূসের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠক প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নিশ্চয়তা দেন। দুই দেশের এই সম্পর্কের মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দুই পক্ষের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব। দুই দেশের সরকারের মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হবে বলে জো বাইডেন বৈঠকে বলেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন।

 ড. ইউনূস-মেলোনি বৈঠক প্রসঙ্গে ইতালি সরকার এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে ইতালি। যাতে বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়। বৈঠকে অভিবাসন নিয়েও দুই নেতা আলাপ করেন। অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে দুই দেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করবে।

ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ যোগ দেন। এই সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার, শিক্ষামন্ত্রী ড. খালেদ মকবুল সিদ্দিকী এবং বিশেষ সহকারী তারিক ফাতেমি উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলকে ড. ইউনূস অনুষ্ঠানে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। দুই পক্ষের বৈঠকে সম্পর্কের বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশ এগিয়ে যাবে বলে তারা জানান। এ ছাড়া দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়াতে বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইউরোপ-আমেরিকা আগেই তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছিল। চলমান জাতিসংঘ অধিবেশনে সেই সমর্থন আবারও পুনরায় প্রকাশ করলেন বিশ্বনেতারা। বিশেষ করে ড. ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেন যেভাবে বুকে টেনে নিয়েছেন তার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল চলমান সেপ্টেম্বরেই ঢাকা সফর করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার বার্তা দেন। এরপর জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে দেশটির প্রেসিডেন্টে ড. ইউনূসকে বিশেষ সময় দিয়ে সেই বার্তা পুনরায় প্রকাশ করলেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব সংলাপ ও অর্থনৈতিক সংলাপসহ একাধিক ফোরাম রয়েছে। বাংলাদেশ এই সময়ে যেসব খাতে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তাতে শতভাগ সহযোগিতা করবে দেশটি। অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের সব সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা মন্ত্রণালয়গুলোর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সামনের দিনে এই যোগাযোগ আরও বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকা সফর করবেন। ড. ইউনূসের সঙ্গে জো বাইডেনের বৈঠকের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী মনিকা বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে নিউইয়র্কে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় করার বিষয়ে আলাপ হয়। উৎপাদন খাত, যুব সমাজ, প্রযুক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি ইস্যুতে ওই বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে কথা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইইউভুক্ত দেশগুলোও বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনে গত দুদিন প্রধান উপদেষ্টা যে সব বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। তাই এই বৈঠকগুলো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশ ডলার সংকটসহ নানা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে। ড. ইউনূস নিউইয়র্কে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা যোগ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যা আমাদের জন্য স্বস্তির। কয়েক দিন আগেও মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপে ছিল বাংলাদেশ। ড. ইউনূস তার ইমেজকে ব্যবহার করে এরই মধ্যে বৈশ্বিক চাপ কমাতে পেরেছেন। যা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। বড় খবর হলো যে গত ১৫ বছরেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেনি, যা ড. ইউনূসের সরকার মাত্র দেড় মাসের মধ্যে করতে সক্ষম হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close