ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলের অভিযোগ
প্রকাশ: বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:১৯ পিএম আপডেট: ২৬.০৯.২০২৪ ৩:২০ এএম  (ভিজিট : ১৬৯৯)
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের নেতৃত্বে তার অনুসারিরা মোংলা ও রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওই নেতা এলাকায় তার উপস্থিতি জানান দিতে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। বিগত আমলে আওয়ামী লীগ দলীয় সুবিধা নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিচ্ছেন নানাভাবে সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতা। তার অনুসারীরা এখন এলাকায় চিংড়ি ঘেরে হামলা লুটপাট চালিয়ে দখল, সুন্দরবন ও বন্দর কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা নানা ব্যবসা বাণিজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নানান চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকির কারণে মানুষজন তটস্থ হয়ে থাকছে। ভুক্তভোগী লোকজন এ ব্যাপারে থানায় বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ দিতেও ভয় পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের গ্রামের বাড়ী জাতীয় সংসদের বাগেরহাট-৩ আসনের (মোংলা ও রামপাল উপজেলা) রামপাল উপজেলার রাজনগরে এলাকায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক হওয়ায় তার জানান দিতে এর আগে এলাকায় এখানে সেখানে কিছু ফেস্টুন মাঝে মধ্যে ঝুলতে দেখা গেছে। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই বিএনপি নেতা মোংলা ও রামপালে রাজনৈতিক একটি বলয় সৃষ্টি করতে থাকেন। যদিও গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি পালন করতে তাকে এলাকায় তেমন একটা দেখা যায়নি। এখন মোংলায় শিল্প এলাকাসহ সুন্দরবন ও রামপালের বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করতে তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন।

দলীয় নেতা কর্মী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি গত ১৩ সেপ্টেম্বর মোংলা উপজেলার দিগরাজ বাজার এলাকায় দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিশাল মটর সাইকেল ও গাড়ির মহড়া দিয়ে বিএনপি সমর্থিত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়। তার এই দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে মটর শোভাযাত্রা নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়া নিয়ে দলীর স্থানীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকদের অভ্যন্তরে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ সমাবেশে বিএনপির মোংলা থানা শাখার আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিবসহ অঙ্গদলের অনেক ত্যাগী নেতা কর্মী আমন্ত্রণ পাননি। 

এখানে বিগত সরকারের আমলে সুবিধা নেওয়া দলের নবাগতদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে স্থানীয় দলীয়নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও ৫ আগস্টের পর গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান এলাকায় বেশ কয়েকবার মটর সাইকেল যোগে মহড়া দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দলীয়ভাবে নিষেধ করার পরও শামিম আধিপত্য বিস্তারের জন্য এলাকায় মটর সাইকেল ও গাড়ি নিয়ে ব্যাপক মহড়া দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে নিজ এলাকা রামপালের রাজনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও চিংড়ি ঘের দখল করে মাছ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা পারভীন। আগে তার স্বামী ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। 

ঘেরটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ভাগ্নে ছাত্র দলের রামপাল কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি মোঃ শাহজালাল গাজী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শামীমুর রহমান তার ইউপি চেয়ারম্যান মামীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এ টাকা তার মামা জীবিত অবস্থায় নিয়েছেন এ দাবি করলেও টাকার বিষয়ে কোন প্রমাণ দেখাতে না পারলেও ১০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে শামিম তাদের চাপ দিচ্ছেন। এ ছাড়া শামীমের ছোট ভাই মনজু ও ভাইপো মামুনের নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা ৫ আগস্টের পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ আশপাশের বিভিন্ন লোকের চিংড়ি ঘের জবর দখল করে গণহারে মাছ লুটপাট চালায়। বর্তমানেও এরা বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে গিয়ে মাছ লুটপাট করাসহ ঘের মালিকদের হুমকি-ধমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।

এদিকে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য বন কর্মকর্তার কাছে তার অন্যায় আবদার যেন রীতিমত সোরগোল পড়ে যায়। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে আরো যেসব অভিযোগ আছে, মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের প্রতিনিধি হিসেবে সিলেক্ট করে দিয়েছেন নিয়মিত তার কাছে চাঁদা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

সম্প্রতি সুন্দরবনে অভয়ারণ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য তার অনুসারীদের লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মরাপশুর, নন্দবালা, আন্ধারমানিক, ঘাঘরামারী খাল ও টেংরার খালে তার লোকজনকে মাছ শিকারের জন্য বন কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করেন ও হুমকি দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব সুন্দরবনের এক কর্মকর্তা বলেন, মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বোদ্ধমারী বাজারের বিএনপি নেতা শামীম একাধিক লোকের জন্য সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য জোর সুপারিশ করেন শামীম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলা ও রামপালের বেশ কয়েকজন বিএনপি ও অঙ্গদলের শীর্ষ নেতা বলেন, 'বসন্তের কোকিলের মতো তিনি এখানে আর্বিভাব হচ্ছেন। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মামলা খেয়ে জেল খেটেছি। শামীম সাহেবের তখন কোন খবর ছিলনা। এখন তিনি মোংলায় এসে অনেক আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করছেন। এছাড়া মোংলার স্থায়ী বন্দরের শিল্প এলাকায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে ব্যবসার ভাগ এবং চাঁদা চাচ্ছেন। এমনকি রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও তিনি ব্যবসার ভাগ চেয়েছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। দলেরও ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তার বিষয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে।'

এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ পতনের পর দলীয় কাউকে কোন বেআইনি কর্মকাণ্ডের সমর্থনতো করেনইনি বরং অনেক ক্ষতিগ্রস্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চাঁদাবাজি ও চিংড়ি ঘের লুটপাটের সাথে জড়িত নন। সুন্দরবনের কিছু নিরীহ জেলে না বুঝে মাছ শিকার করার অপরাধে আটক হলে তাদেরকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দিই। আর রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজি ও ব্যবসার ভাগ চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মোংলা রামপালে সংসদ নির্বাচন করবো এজন্য ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় বিএনপির প্রতিপক্ষ কিছু নেতারা এসব ছড়াচ্ছেন।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close