ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ: বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৪৫ এএম আপডেট: ২৫.০৯.২০২৪ ৬:০৬ পিএম  (ভিজিট : ৪০৭)
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সংবিধান সংস্কার নিয়ে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রধান পদে পরিবর্তনও এসেছে; আইনজীবী শাহদীন মালিকের জায়গায় এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজকে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগকে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানালেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। কারও মতে, এ সরকার সংবিধানের আলোকে দায়িত্ব গ্রহণ করেনি; তাই সংবিধান সংস্কার করার এখতিয়ার তাদের নেই। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সংবিধান সংস্কার জরুরি। গণভোটের মাধ্যমে তা করতে পারে এ সরকার।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন ও কমিশন প্রধানের নাম ঘোষণা করেন। এতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছিল আইনজীবী ড. শাহদীন মালিককে। কমিশনগুলো অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে। আর কাজ শেষে তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করছে সরকার। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে। ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সময়ের আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান মোতাবেক আসেনি। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে। প্রথমত সংসদ ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ সরকারকে সংবিধান সংস্কার করতে হলে একটি রূপরেখা দিতে হবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সংবিধানের কিছু কিছু ধারা স্থগিত করতে পারে। পরে তা সংসদের মাধ্যমে অনুমোদন করে নিতে হবে। যেমন আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান ব্যবস্থা স্থগিত করতে হবে। এগুলো সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, পুরো সংস্কার কমিশন এখনও গঠন হয়নি। পুরো কমিশন দেখে মন্তব্য করা যাবে তারা কতটা সক্ষম হবে সংবিধান সংস্কারে। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সংবিধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে  সংস্কার চাই। সে জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চায় জামায়াত। কারণ সংস্কার না হলে দীর্ঘমেয়াদি ফল আসবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সময়ের আলোকে বলেন, এখানে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করতে পারবে কি পারবে না, বিষয়টি তা নয়। মূল বিষয় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ সরকার একটি পদ্ধতি ঠিক করবে। এটি গণপরিষদের মাধ্যমেও করা যায় আবার গণভোটের মাধ্যমেও সংবিধান সংস্কার করা যায়। আগে এর পদ্ধতিগত দিক ঠিক করতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সময়ের আলোকে বলেন, আইনের দোহাই দিয়ে তো অনেক কথা বলা যায়। ১৯৯১ সালে প্রয়োজনের তাগিদে অনেক কিছু রদবদল হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে। বিভিন্ন দলমতের সমর্থন নিয়েই তারা সরকার গঠন করেছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারা দায়িত্ব নিয়েছে। এটি কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। সংবিধানসহ মৌলিক সংস্কারের এখতিয়ার তাদের রয়েছে। বিগত ১৫ বছর এ সংবিধান মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের জনআকাক্সক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সংবিধানের মাধ্যমেই শেখ হাসিনা সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল। তাই চাইলে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান বাতিল করতে পারে। তবে অবশ্যই অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সময়ের আলোকে বলেন, সংবিধান সংস্কারের প্রধান দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের, যা সংসদের মধ্য দিয়ে অনুমোদন করতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নেই সংবিধান সংস্কারের। তারা বড়জোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের অংশীজনদের নিয়ে ঐকমত্য তৈরির ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রস্তাবগুলো একত্র করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করতে গেলে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সময়ের আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ও সেটির বৈধতা সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে না এবং হবেও না। এ সরকারের বৈধতার ভিত্তি হচ্ছে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ। আমি সংবিধান সংস্কার কমিটি গঠনকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ^াস করি, এ কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পরে দেশের সব ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের সদস্য, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি, আইন বিশেষজ্ঞ, জাতীয় নাগরিক কমিটির নবীন প্রজন্মের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন এবং মতামতের ভিত্তিতে সমন্বিত খসড়া তৈরি করবেন, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সরকারের নির্বাচন বা গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। দ্বিতীয় গণপ্রজাতন্ত্র গড়ার জন্য ছোট এবং সহজ ভাষায় বোধগম্য সংবিধান প্রণয়ন তাই জরুরি।

এদিকে সংবিধানের আমূল পরিবর্তন বা নতুন সংবিধানের জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদকেই শ্রেয় বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, জনগণের অংশগ্রহণ যদি না থাকে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি জাতীয়করণ করবেন কি করবেন না, সেটি তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সংবিধান সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার জন্য উচিত ছিল বিপ্লবী সরকার করা। সেটি হয়নি। এ সংবিধানের অধীনে শপথ না নেওয়া। সেটি তো হয়নি। সংবিধানের অধীনেই তো শপথ নিয়েছে। তা হলে ওই বর্তমান সংবিধান সামনে রেখে সংশোধন করতে হবে। আমরা নিজেরাই দল থেকে উদ্যোগ নিচ্ছি, সংবিধানের কী কী পরিবর্তন হতে পারে, সেই কাজ শুরু করেছি।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close