ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কিস্তি দিতে না পারায় অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:৩৯ পিএম আপডেট: ২৪.০৯.২০২৪ ৮:৪০ পিএম  (ভিজিট : ৪২৩)
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা পালোপাড়া গ্রামের এক নারী কিস্তির টাকা দিতে না পারায় তাকে অনৈতিক কু-প্রস্তাব ও মারধর করার হুমকি এবং থানা প্রশাসন দিয়ে থানায় মিথ্যে দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলেছেন এক এনজিওর কর্মী ও তার ম্যানেজার। এমন এক অভিযোগ উঠেছে ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (ডিএফইডি) বিরুদ্ধে। 

ভুক্তভোগী ওই নারী উপজেলার পালোপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী কোহিনুর বেগম। ওই এনজিও থেকে কোহিনুর বেগম ঋণ নেয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা নেয় স্থানীয় আরেকজন নারী চামেলী বেগম।

সরেজমিনে বিষয়টির খোঁজখবর নিতে গেলে উল্টো ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) নামের ওই এনজিওর কর্মী ও পুঠিয়া শাখার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে উঠে আসে গা শিউরে ওঠার মতো নানাবিধ অভিযোগ। কয়েকটি কিস্তি দিতে না পারায় জলি নামের একজনের ওপর দেয়াও হয়েছে মামলা।

মালয়েশিয়া প্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী কোহিনুর বেগম সংসারের অভাব মেটাতে ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) নামের এনজিওর পুঠিয়া শাখা থেকে সংসারের অভাব মেটাতে কিস্তিতে লোন নেয়। সংসার ভালোই চলছিল হঠাৎ মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে আটক হয়ে দুই মাসের জেল হয় রহিদুলের। যার কারণে কোহিনুর বেগম অনেক কষ্ট করে কিস্তি দিয়ে আসছিলেন। পরে, গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় কিস্তির টাকা নিতে আসে এনজিও কর্মী নাহিদা ও ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম, সাথে ছিলেন চামেলি বেগম নামের স্থানীয় এক নারী। এসময় কহিনুর বেগম কিস্তির টাকা দিতে না পারলে বাবা-মা তুলে গালিগালাজ শুরু করে তারা। এসবের প্রতিবাদ করায় এনজিও ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম ফিরে গিয়ে পুঠিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তাদের নিকট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয় ঋণ গ্রহীতা কোহিনুর ও তার বাড়ির লোকজন। 
অন্যদিকে কহিনুরের প্রতিবেশীরা বলছেন, ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যে এবং হয়রানিমূলক। অভিযোগ পত্রে দেখা যায়, ওই এনজিওর ওই অভিযোগ পত্রে একজন মৃত মানুষের নামেও অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত ভুক্তভোগী কোহিনুর বলেন, এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। ১০ হাজার টাকা নিয়েছে চামেলি। এছাড়াও ওই এনজিওতে আমি জমা দিয়েছি তিন কিস্তিতে আরও ৫ হাজার টাকাসহ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৫১ হাজার ৫০০ এবং আরও ১৫ হাজার টাকা সঞ্চয় রয়েছে আমার। 

এসব বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজখবর নিতে গেলে কোহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী যেদিন মালয়েশিয়াতে পুলিশের হাতে আটক হয় সেদিন রাত ১২টা পর্যন্ত আমার বাসায় ছিল ম্যানেজার আশরাফুল স্যার। সেসময় সে আমাকে নানান রকম প্রস্তাব দিতে থাকে। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্যার আমার উপর কিস্তি পরিশোধের জন্য খুব চাপ দিতে থাকে। এছাড়াও বলে পুঠিয়া বাজারে আমি গেলে আমাকে চিরে ফেলবে আরও অনেক কিছু করবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। পরে আবার কিছু দিন পর কিস্তি চাইতে আসলে আমি বলি আমার কাছে টাকা নেই। আমার স্বামী বিদেশ থেকে আসুক তারপর জমি বিক্রি করে হলেও আপনার টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু তা কোনভাবেই মানতে চায় না ম্যানেজার আশরাফুল স্যার। এছাড়াও মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে আর আমার ভিডিও করে নিয়ে গিয়ে বাহিরে মানুষদেরকে দেখায়। এসব নিয়ে আমি খুব চিন্তায় আছি।

শরিফুল ইসলাম স্থানীয় একজন বলেন, ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) এনজিওর ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম সে সবার সামনে মা বোন তুলে গালাগালি করে। অভিযোগ পত্রে একজনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে যার নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, এদের বাসায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানিনা। আমি কি করে সাক্ষী দেব। এছাড়াও এনজিওর স্যার আমাকে কিছুই বলেনি। 

প্রতিবেশী রিয়া আক্তার রুনা বলেন, এখানে ছিনতাইয়ের মত কোন ঘটনাই ঘটেনি। এছাড়াও তাহেরা বেগম নামের অপর এক প্রতিবেশী বলেন, দুদিন আগে এনজিওর ম্যানেজার ও আরেকজন কর্মী এসে নানান রকম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে পরে তারা চলে যায়। আর এখন শুনতে পাই তাদের নামে মামলা হয়েছে। 

আরেকজন প্রতিবেশী আহলেয়া বেগম বলেন, ছিনতাই বা এনজিও লোকদেরকে মারধর করার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি উল্টো তারা নানান রকম বাজে ভাষায় কথা বলে গেছেন। কোহিনুরের ভাসুর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা কাজ করে খাই বাড়ির বাইরে থাকি মাঝেমধ্যেই শুনতে পাই ওই এনজিওর ম্যানেজার এসে নানান রকম খারাপ কথা বলে। মাঝেমধ্যে কু-প্রস্তাব দেয়। দুদিন আগে ম্যানেজার এনজিও কর্মী নাহিদা এবং স্থানীয় একজন ব্যক্তি চামেলী তারা এসে নানান রকম কথা বলছেন আর গালিগালাজ করছেন। পরে আমি এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আমাদের উপর চড়াও হয়। পরে থানায় গিয়ে আমাদের উপর আবার অভিযোগও দেয়। এদের আচরণ খুবই খারাপ। 

এছাড়াও আরও বহু মানুষের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা কেউ জানেনা সেখানে ছিনতাই বা অন্য কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা। উল্টো সবাই এনজিও ম্যানেজার ও কর্মীদের ওপর দোষারোপ করছেন। 

অন্যদিকে তাহেরের মোড় এলাকার আবুল বাশার নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, ম্যানেজারের আচরণ সন্ত্রাসদের মতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ম্যানেজার এদিকে এসে ভোটের প্রচারণা ও ভোট প্রার্থনা করেছেন, একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের সময় আরেকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন, প্রচারণা করেছেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে আসলে সে এখানে রাজনীতি করতে এসেছেন নাকি এনজিও চালাতে এসেছেন।

পুঠিয়া থানায় অভিযোগকারী নাহিদা বলেন, কিস্তি চাইতে গেলে উল্টো আমাদের ওপর খারাপ ব্যবহার করে। ওরা যা অভিযোগ করছে সবগুলো মিথ্যে। স্থানীয়ভাবে বসে মীমাংসার জন্য কথাবার্তা হচ্ছে। 

এসব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি) ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম উগ্র হয়ে বলেন, ‘আপনারা নিউজ করলে আমরা আমাদের সাংবাদিক দিয়ে নিউজ করবো। কেন ফোন দিয়েছি জানতে চেয়ে লাইনটা কেটে দেয়।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, এই ধরনের একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সময়ের আলো/আরআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close