ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

আজ দুপুরে ইউনূস-বাইডেন বৈঠক
রাষ্ট্র নতুন করে গড়তে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০১ এএম  (ভিজিট : ৩৩৬)
গত ৫ আগস্টের পর নতুন দৃশ্যপটে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং উদার বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার সব খাতেই সংস্কার কর্মসূচিতে হাত দিয়েছে। এই সংস্কার কর্মসূচি সফল করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মঙ্গলবার দুপুরে (নিউইয়র্ক স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আসন্ন বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং মর্যাদার। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাইড লাইনে সাধারণত দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে বৈঠক করেন না। 

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেখানে বহুপক্ষীয় বৈঠকগুলোতে অংশ নিয়ে থাকেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি খুবই মর্যাদাকর। এই বৈঠকে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ তুলে ধরে আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে- তা জো বাইডেনকে জানাবেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার কর্মসূচি সফল করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে চায় এই বার্তা ওয়াশিংটন ঢাকাকে আগেই জানিয়েছে। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বহুমাত্রিক। গত ৫ আগস্টের আগেও ওয়াশিংটন বলেছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে আস্থা ফেরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পুনর্গঠনে যে সব সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে তাতে সহযোগিতা করবে তারা। মূলত বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থান করায় এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মতো অবস্থানে অবস্থান করায় ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বাজার এবং অর্থনৈতিক উত্থান বাড়তি গুরুত্ব যোগ করেছে।

ভূ-রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বৈরিতা চলছে। ভারতের সঙ্গেও চীনের বৈরিতা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-চীন এই তিন দেশের সঙ্গে আবার বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। চীনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও কাছে চায়। ভারত চীনকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশকে কাছে চায়। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত নিজেদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করলেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে যে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে, কারও দাবার ঘুঁটি যেন না হয়।

বাংলাদেশ মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে গত আগস্টে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বিদেশ নীতিতে আমাদের সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই মূলমন্ত্রের পরিবর্তন হবে না। আমরা চাই যে প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হোক। মানুষ যাতে প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্কটা উপলব্ধি করতে পারে। ভারতের সঙ্গে আমরা সত্যিকারের দীর্ঘস্থায়ী ভালো সম্পর্ক গড়তে চাই। চীন-ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা পছন্দ করি বা না করি কিন্তু তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিশে^র এক নম্বর পরাশক্তি এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি স্বার্থ তাদের সঙ্গে। আমাদের বড় প্লেয়ারদের সঙ্গে ডিল করতে হয়। আমরা ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে চাই। যারা যত বেশি বড় দেশ তারা তত বেশি গুরুত্ব পাবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখেই সবার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ইউনূস-বাইডেন বৈঠক বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এই বৈঠক একটি ভালো লক্ষণ। তবে যুক্তরাষ্ট্র যত আদর করুক না কেন, তাদের কিন্তু এর পেছনে স্বার্থ থাকতে পারে, সেখানে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই থাকলে বাংলাদেশের চলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বা সেবা সবকিছুই কিন্তু দামি। তারা আমাদের সবকিছু দিতে পারবে না। আমাদেরকে ভারত ও চীনকে নিয়েও চলতে হবে। বাংলাদেশকে নিজেদের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে। কারও দাবার ঘুঁটি যেন না হয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শাহীদুল হক দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে। এর আগে ১৯৮৩ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বৈঠক হয়। এই প্রেক্ষাপটে ইউনূস-বাইডেন বৈঠক অনেক বড় একটা বিষয়। ৫ আগস্টের আগে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয় ছিল। এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কমবে কিন্তু সহযোগিতা বাড়বে। এরই মধ্যে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়স ব্যাংকসহ বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এই বৈঠকের পর এসব বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক বার্তা আরও বাড়বে। এমনও হতে পারে যে জিএসপি ইস্যুতে ভালো খবর পাওয়া যেতে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শাহীদুল হক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বাড়ছে। ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে এই বিষয়ে আলাপ হতে পারে এবং ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি কমতে পারে। পাশাপাশি গত ৫ আগস্টের আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যে ধরনের ব্যাকফুটে ছিল সেই জায়গায়ও এই বৈঠকের পর বাংলাদেশ অনেক রিলাক্স থাকবে। অধ্যাপক ড. ইউনূসের যে আন্তর্জাতিক ইমেজ রয়েছে এখানে তা কাজ করবে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close