ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিদ্যুৎ ঘাটতির পেছনে ভারত ও গ্যাস সংকট
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম  (ভিজিট : ৬২৬)
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে। রাজধানীতে কিছুটা কম হলেও মফস্বল এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে, যদিও পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ ঘাটতির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের সরবরাহ কমে যাওয়া। 
কমপক্ষে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারতে আদানিসহ অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপরেই রয়েছে দেশে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়া। এর ফলে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন কমেছে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে ভারত থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি প্রকট হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, একসঙ্গে অনেক ঘাটতি না হয়ে যেকোনো একটি হলেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। সরবরাহ বাড়াতে বলা হয়েছে ভারতের আদানিসহ অন্য কেন্দ্রগুলোকে। তারা সরবরাহ না বাড়ালেও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কেনা এলএনজি দ্রুত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির এলএনজি চলে আসবে। আগামী মাসের শুরুতে স্পট মার্কেটের এলএনজি চলে আসবে। তখন আর সংকট থাকবে না। এ ছাড়া আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে তাপমাত্রাও কমে যাবে, তখন চাহিদাও কমবে। ফলে দেশে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি থাকবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াট। ভারত থেকে আমদানি এবং দেশে উৎপাদন মিলিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ হাজার মেগাওয়াট। চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আদানির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকাবস্থায় চাহিদানুয়ায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। ২৮ আগস্ট রাত ২টায় আদানি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। ২৯ অগাস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ১ হাজার ৫২৭ মেগাওয়াট এবং সবশেষ রাত ১২টায় ১ হাজার ৫১৬ মেগাওয়াট সরবরাহ করে। এরপর থেকেই সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার পর্যন্ত যা কখনোই ১ হাজার ১৫০ মেগাওয়াটে ওঠেনি। ত্রিপুরা থেকেও ১৬০ মেগাওয়াট সরবরাহ করার কথা, যা ১৬ আগস্ট থেকে কমতে থাকে এবং এরপরে কখনোই সরবরাহ ১০০ মেগাওয়াট স্পর্শ করেনি। ভেড়ামারা এইচভিসি থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট সরবরাহ করার কথা। এখান থেকে সরবরাহ প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে।

গত ২৮ আগস্টের আগে আদানির সরবরাহ করা বিদ্যুতের কোনো পরিসংখ্যান ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানাতে চাইলে কিছু জানাতে পারেনি পিজিসিবি।

এদিকে দেশি কূপগুলো থেকে গ্যাস উৎপাদন ও আমদানি করা এলএনজি মিলিয়ে মোট সরবরাহ সক্ষমতা দৈনিক ৩৮২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। আর চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। গত ২৩ মের আগে ৩ হাজার ১০০ কোটি ঘনফুটের আশপাশে সরবরাহ করা হচ্ছিল। গত ২৩ মে এলএনজি সবরাহ করা হয় ১০৩ কোটি ঘনফুট। এরপর থেকেই কমতে থাকে গ্যাস সরবরাহ। ২৪ মে থেকে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ কমে যায়। ২৪ মে সরবরাহ করা হয় ৬৪ কোটি ঘনফুট। ২৫ মে সর্বনিম্ন ৩২ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। ২৯ জুন ৬০ কোটি ঘনফুট, ২০ আগস্ট ৬০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। চলতি মাসে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ শুরু হলেও এলএনজি সংকটের কারণে ৫৮ থেকে ৫৯ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা ও পিডিবি বলছে, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। রোববার ৯০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়েছে, চাহিদা ২৩০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে এলএনজি ৫৮ কোটি ঘনফুট। দেশে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদানুযায়ী গ্যাসের চাহিদা ১২০ কোটি ঘনফুট। তিন মাস আগেও গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। এখন হচ্ছে ৫ হাজার মেগাওয়াটের আশপাশে।

পিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এখন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি সর্বোচ্চ ১ হাজার মেগাওয়াট। কয়েক দিন আগে ছিল ২ হাজার মেগাওয়াট। ভারত থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ না কমলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকত। আর সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে দীর্ঘদিন সরবরাহ বন্ধ না থাকলে গ্যাস সংকট এত দীর্ঘ হতো না। বিদ্যুতের ঘাটতিও থাকত না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চাহিদানুয়ায়ী গ্যাস না পাওয়ায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। আদানি জানিয়েছে, বকেয়া টাকা না পাওয়ায় তারা জ্বালানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এ জন্য তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সময়ের আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শিগগির আরও উন্নতি হবে। সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম দিকে আসার কথা। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যে এলএনজি আমরা কিনি সেটি এ মাসেই আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে আসবে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে, বিদ্যুতের ঘাটতিও থাকবে না।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close