ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ক্লাবের উন্নয়নে পৌরসভার কোটি কোটি টাকা ব্যয়
আলো ঝলমলে সেই রিক্রিয়েশন ক্লাব এখন ভুতুরে ভবন
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:০০ পিএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৪ ৯:১৭ পিএম  (ভিজিট : ১৭১)
আলো ঝলমলে চকচকে পরিপাটি আর জাঁকজমকপূর্ণ জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করলেও জনতার রোষানলে ক্লাবটি এখন কেবলই স্মৃতি। বিধ্বস্ত এক ভুতুরে ভবন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লাবটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ভস্মীভূত হয় ক্লাবের সবকিছুই। জনতার রোষানলে বিধ্বস্ত ক্লাবটির প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্লাবটি জনতার রোষানলে পরার কারণ হিসেবে এখানে নিয়মিত চলা মদের আড্ডা আর হাউজি (জুয়া) খেলাকেই মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ক্লাবটি অনুমোদন নিলেও মূলত ক্লাবটি সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও জেলার প্রভাবশালী বিত্তবান ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হতো। পৌরসভার নিজস্ব ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশনের জায়গায় সর্বসাধারণের সুস্থ বিনোদন, খেলাধুলা আর ব্যায়ামের জন্য জামালপুর পৌর শহরের পলাশগড় এলাকায় ক্লাবটি নির্মাণ করা হলেও মূলত স্থানীয় ভিআইপি ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনে জন্য জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামে ক্লাবটি আত্মপ্রকাশ করে। ক্লাবটির উন্নয়নে জেলা পরিষদ ও পৌরসভা থেকেও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ক্লাবের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ওই সময় বন্ধ করে দেয়া হয় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তাটিও। 

একটি ক্লাবের পেছনে পৌরসভার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করাকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাত বারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম রিক্রিয়েশন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পৌর সভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু ক্লাবটির কোষাধ্যক্ষ।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৪ সালে জেলা প্রশাসক ১ একর ৪৬ শতাংশ জমি পৌরসভাকে প্রদান করেন। সেই জমিতে ১৯৯৫ সালে ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়। পরে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসক ২০০৯ সালে পলাশ গড় মৌজায় ২ একর ৮৫ শতাংশ ও সিংহজানী মৌজায় সাড়ে ৩১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে পৌরসভাকে দেন। এতে পৌরসভার জমি গিয়ে দাঁড়ায় ৪ একর সাড়ে ৬২ শতাংশে। সেই জমির ওপর ভাগার বা ডাম্পিং স্টেশনের জন্য সেড তৈরি করা হয়। ওই ভাগাড়ের উত্তর পার্শ্বে দিয়ে পলাশ গড় এলাকার লোকজনের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে দেওয়ানগঞ্জ বাইপাস সড়ক নির্মাণ হওয়ার পর ওই ভাগাড়ে ভিআইপি বিনোদন ক্লাব গড়ার উদ্যোগ নেন মির্জা আজম। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তৎকালীন মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনির মাধ্যমে পৌরসভার মালিকাধীন অধিগ্রহণকৃত জমিতে নিজস্ব (পৌরসভার) উদ্যোগে সর্বসাধারণের সুস্থ চিত্তবিনোদন, খেলাধুলা ও ব্যায়ামের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমোদন নেয়া হয়। ওই বছরই সেই জমি ইজারা জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বান করে। ইজারায় অংশ নেন মেসার্স মাসুম এন্ড ব্রাদার্স, আয়ান এন্টারপ্রাইজ ও জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব। পরে রিক্রিয়েশন ক্লাব সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ২০ বছরের জন্য ৩ একর সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি ইজারা পায়।

আরও জানা যায়, পরবর্তীতে ২০২১ সালে ডাম্পিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে শহরের ময়লা ফেলার জন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালে দশ একর জমিতে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের কম্পপুর এলাকায় স্যানেটারি ল্যান্ড ফিল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পরে নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেওয়ানগঞ্জ বাইপাস থেকে পলাশগড় মোড় পর্যন্ত ৮৫০ মিটার ডিবিসি’র উন্নয়ন সড়ক এবং দেওয়ানগঞ্জ বাইপাস থেকে পলাশগড় মোড় পর্যন্ত ১৫০ মিটার আরসিসি উন্নত সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পের টাকায় ক্লাবের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ১২ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। এতে ছয় গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি একটি ক্লাবের জন্য পৌরসভার এতো ব্যয় অযৌক্তিক ও বিধি পরিপন্থি বলে মনে করছেন অনেকেই।

জানা যায়, এই ক্লাবের সদস্য হতে প্রত্যেক সদস্যদেরকে গুণতে হয়েছে নগদ ৫ লাখ টাকা। আর ক্লাব উদ্বোধনের পরে সেই টাকা গিয়ে দাঁড়ায় সাত লাখে। এছাড়াও প্রতিটি সদস্যকে মাসিক চাঁদা হিসেবে সদস্যদেরকে গুণতে হতো ১ হাজার করে টাকা। বিধ্বস্ত এই বিনোদন ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৪৬৯ জন। 

জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, লাখ লাখ টাকা দিয়ে যারা ওই ক্লাবের সদস্য হয়েছে, তাদের আয়ের উৎস ও সম্পদের খোঁজ নেয়া প্রয়োজন। ক্লাবের সদস্যদের সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক কমিটির এই সভাপতি।

জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ওই ক্লাবের সাথে পৌরসভার বা জনগণের কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নেই। সেখানে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। ক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছে। তাদের স্বার্থেই ক্লাবটি হয়েছে। ক্লাবের জন্য পৌরসভা এভাবে জায়গাটি দিতে পারেন না আর পৌরসভার কোটি কোটি টাকা ক্লাবের উন্নয়নে ব্যয় অযৌক্তিক বলেও মনে করেন তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে নিয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  রিক্রিয়েশন ক্লাব   জামালপুর   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close