ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ভিডিও দেখে মরদেহ শনাক্ত স্ত্রীর
‘মধু হই হই’ গানের তালে তালে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৫৯ পিএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৪ ৫:২২ পিএম  (ভিজিট : ২৩৪)
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান ‘মধু হইহই-বিষ হাওয়াইলা’ গেয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ফলের আড়তের এক কর্মচারীকে। গান গেয়ে পেটানোর একটি ভিডিও গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে। হতভাগ্য যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)।

গত ১৪ আগস্ট স্বজনরা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে শাহাদাতের লাশের সন্ধান পায়। পরদিন ১৫ আগস্ট লাশ উদ্ধারের পর শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পরিবারের কেউ জানতে পারেনি গানের তালে তালে শাহাদাতকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে গেলে স্বজনরা শাহাদাতকে চিহ্নিত করার পর মৃত্যুর ঘটনাটি জানতে পারে। তবে মামলা দায়েরের পর এক মাসের বেশি সময় পার হলেও ঘাতকদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, ভিডিও দেখে খুনিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। 

নিহত শাহাদাতের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামে। তিনি ওই বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে থাকতেন নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। 

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক গোল হয়ে গাইছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা’। এ সময় গানের সুরে তাল মিলিয়ে কেউ মুখ দিয়ে বাজাচ্ছেন বাঁশি। অন্যরা করছেন উল্লাস। সংঘবদ্ধ যুবকদের মাঝেই ছিল শাহাদাত। তার পরনে ছিল নীল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট। দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সাথে। গান গেয়ে গেয়ে একের পর এক নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে তাকে।
১৪ আগস্ট নগরীর সিএসসিআর নামে বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি: সময়ের আলো

১৪ আগস্ট নগরীর সিএসসিআর নামে বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি: সময়ের আলো


সিএমপির পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট লাশ উদ্ধারের পর শাহাদাতের স্বজনরা ১৫ আগস্ট আমাদের থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার আসামিরা ছিল অজ্ঞাত। ১৪ আগস্ট নগরীর সিএসসিআর নামে বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে নেয়ার পর তার স্ত্রী শারমীন আক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে। এরপর থানায় হত্যা মামলা করেন শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন। 

ভিডিও দেখে নিহত যুবকের পরিচয় পাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ বলছে, ভিডিওতে মারধর করা যুবকের পরনে থাকা পোশাকের সঙ্গে উদ্ধার লাশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে তার স্ত্রী শারমিনকে পাঁচলাইশ থানায় ডেকে আনা হয়। থানায় ভিডিও দেখে স্ত্রী শনাক্ত করেন সিএসসি আর হাসপাতালের সামনে থেকে উদ্ধার লাশটিই ভিডিওতে দেখা তার স্বামী।

মামলার এজাহারে দেয়া তথ্যে বলা হয়, ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে ফলমন্ডির কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত হোসেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহাদাতকে ফোন করেন স্ত্রী শারমীন। তখন শাহাদাত জানায় কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবে। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় শাহাদাতের খোঁজ নিতে থাকেন বিভিন্ন স্থানে। এক পর্যায়ে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এরই মধ্যে মামলার বাদী শাহাদাতের চাচা হারুন ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখতে পান সিএসসিআর হাসপাতালের সামনে একটি লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখতে পান লাশটি তার ভাতিজা শাহাদাতের। পরে খবর পেয়ে পাঁলাইশ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চমেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর লাশ পাঠানো হয় চমেকের মর্গে।

পুলিশ বলছে, দুই হাত দুই দিকে শক্তভাবে বেঁধে প্রচণ্ড মারধরের কারণেই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ভিডিও দেখে মারধরে জড়িত যুবকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত জড়িতরা গ্রেফতার হবে।
 
সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  পিটিয়ে হত্যা   গণপিটুনি   অপরাধ-হত্যা   চট্টগ্রাম বিভাগ  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close