ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

এনসিটিবিতে ১৪৩ কোটি টাকালোপাট
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৩ এএম  (ভিজিট : ৫৭৪)
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) ৯টি খাতে ১৪৩ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পাওয়া গেছে। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কাজ না করেও অনেকে সম্মানী পেয়েছেন। 

দরপত্রের ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিধিবহির্ভূতভাবে সম্মানী প্রদান করায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। অনিয়মে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কমছে না।

বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কাজের বিপরীতে সম্মানী দেওয়া হয়েছে। আবার সম্মানী বিল থেকে নির্ধারিত ভ্যাট ও আয়কর কাটা হয়নি। কাজ না করে সম্মানী নেওয়াদের তালিকায় আছেন এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, পাঠ্যপুস্তক সদস্য অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল করিম, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (অর্থ) মির্জা তারিক হিকমত, সচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল করিমসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসানকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান করেছেন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলের ওই কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এখনও এনসিটিবিতে আছেন।

বিভিন্ন খাতের অনিয়মের মধ্যে সার্ভিস চার্জের বিল থেকে নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও আয়কর না কাটা, সরবরাহকারীর বিল থেকে নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও আয়কর না কাটা, অনিয়মিতভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের কাজের বিপরীতে অগ্রিম প্রদান, স্পেসিফিকেশন আর এস্টিমেট একই হওয়া সত্ত্বেও একই সময়ে বিভিন্ন দরে বই মুদ্রণ করায় আর্থিক ক্ষতি, বই মুদ্রণ কাজে একই স্পেসিফিকেশন এবং এস্টিমেট হওয়া সত্ত্বেও একই সময়ে বিভিন্ন দরে কাগজ ক্রয় করার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ২০১৯-২০ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অডিট চলাকালে বেশ কিছু আর্থিক অনিয়ম ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও আর্থিক বিধিবিধান মানা হয়নি।

স্পেসিফিকেশন এবং এস্টিমেট একই হওয়া সত্ত্বেও একই সময়ে বিভিন্ন দরে বই মুদ্রণ করা হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ১০৬ কোটি ৮৮ হাজার ৮৯৫ টাকা। বিস্তারিত নিরীক্ষাকালে প্রাক্কলন এবং দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন যাচাইয়ে দেখা যায় যে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল  এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সংক্রান্ত প্রথম প্যাকেজের ৩২০টি এবং দ্বিতীয় প্যাকেজের ৩৪০টি লটে হুবহু একই স্পেসিফিকেশন এবং একই এস্টিমেটের বই একই সময়ে বিভিন্ন দরে মুদ্রণ করা হয়েছে। প্রথম প্যাকেজের লট সংখ্যা ৩২০ এর মধ্যে প্রথম ৭০টি লটে টাইমস মিডিয়া লিমিটেড (লট নম্বর ৪০ ও ৫১) সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং উদ্বৃত দর ছিল ১ টাকা ৬৩ পয়সা/ফর্মা (কাগজসহ)। একই প্যাকেজের অন্যান্য লটগুলোর ক্ষেত্রে আনন্দ প্রিন্টার্সসহ অন্যান্য প্রেসকে ১ টাকা ৬৩ পয়সা /ফর্মা (কাগজসহ) এর চেয়ে বেশি দরে কার্যাদেশ প্রদান করে। আনন্দ প্রিন্টার্সের মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সেজ ভাই রাব্বানী জব্বার।

প্রথম প্যাকেজের অবশিষ্ট ২৫০টি লটের মধ্যে ৩টি লটে (লট নম্বর ৩২০) এর ক্ষেত্রে সিটি সানজানা-আর আর রুপালী (জেভি) সর্বনিম্ন দরদাতা এবং উদ্বৃত দর ১ টাকা ০১ পয়সা/ফর্মা (কাগজসহ)। একই প্যাকেজের অন্যান্য লট সৃষ্টি প্রিন্টার্সসহ অন্যান্য প্রেসকে ১ টাকা ০১ পয়সা/ফর্মা (কাগজসহ) এর চেয়ে বেশি দরে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্যাকেজে লট সংখ্যা ৩৪০টি। এর মধ্যে ৩টি লটে (লট নম্বর ৪, ২৭৩ ও ২৭৫) এর ক্ষেত্রে উর্মি প্রিন্টিং প্রেস, বনফুল আর্ট প্রেস ও আমাজান প্রিন্টিং প্রেস সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং উদ্বৃত দর ১৮ পয়সা/ফর্মা। একই প্যাকেজের অন্যান্য লটের ক্ষেত্রে জয় প্রিন্টিং প্রেসসহ ৩৩৭টি প্রেসকে ১৮ পয়সা/ফর্মা এর চেয়ে বেশি দরে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। মূলত জিএফআর-১০ অনুসারে আর্থিক যথার্থতার মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। সর্বনিম্ন দরদাতাকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনায় না নিয়ে বিভিন্ন দরে ক্রয়কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। এর ফলে স্পেসিফিকেশন, এস্টিমেট ও সময় একই হওয়া সত্ত্বেও বেশি দরে কার্যাদেশ হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলেছে নিরীক্ষা দফতর।

২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ক্ষেত্রেই একই রকমের অনিয়ম হয়েছে। একই স্পেসিফিকেশন এবং এস্টিমেট হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন দরে কাগজ ক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। প্যাকেজের ১৯টি লটে ১৮ হাজার ৫০০ টন মুদ্রণ কাগজ কেনা হয়। প্যাকেজটির ১৯টি লটের মধ্যে ১৩ নম্বর লট এবং ১৮ নম্বর লটটির দরপত্র বাতিল করা হয়। অবশিষ্ট ১৭টি লটের মধ্যে টনপ্রতি সবনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে বেশি দরে কার্যাদেশ হয়েছে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষায় এ ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। প্রত্যাশা হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। অনিয়মে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে এ ধরনের প্রতিবেদন হবে, কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়ম কমবে না।


সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close