ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অভিযোগের তীর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দিকে 
ক্ষমতার দাপটে উজাড় পাহাড়-বন
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:২৭ এএম আপডেট: ২৩.০৯.২০২৪ ৮:০৪ এএম  (ভিজিট : ১৪৫)
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পাহাড় কেটে সাবাড় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। পাহাড় কাটার অবৈধ এই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহেদের নাম। শুধু পাহাড় গিলেই ক্ষান্ত হয়নি, পাহাড়ে থাকা মূল্যবান প্রজাতির অনেক গাছ কেটেও সাবাড় করেছে চক্রটি। দিনের পর দিন এক্সেভেটরের সাহায্যে পাহাড় কেটে সাবাড় করার ঘটনায় মামলাও হয়েছে। উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা মইন্যার টেক এলাকায় কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের গা-ঘেঁষে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার এই মহাযজ্ঞ চলেছে।

এ ব্যাপারে জানার জন্য বিট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাতকানিয়া বড়দুয়ারা বিট থেকে সম্প্রতি বদলি হয়ে গেছেন বলে জানান। তবে পাহাড় কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, বিটে জনবল স্বল্পতার কারণে শক্তিশালী ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এতদিন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া তারা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন ছিলেন। পাহাড় কাটার সময় সিন্ডিকেটের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকতেন। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদফতর মামলা করেছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. জাহেদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, আমিতো মাটির ব্যবসা করি না। প্রকৃতপক্ষে আমি পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত নই। কারা কেটেছে সেটাও আমি জানি না। পাহাড় না কাটলে কেন তাকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছেÑএমন প্রশ্ন করা হলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মো. জাহেদ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেছেন নুরু, মোক্তার ও আলমগীর। তাদের সঙ্গে স্থানীয় আরও কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মো. জাহেদের বাড়ি সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বড়দুয়ারা সিকদার পাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মুহাম্মদ ইউনূসের ছেলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকা সাতকানিয়ার বাজালিয়ার হলুদিয়ার মইন্যার টেক এলাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পদুয়া রেঞ্জের আওতাধীন বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের মালিকানাধীন বেশ কিছু পাহাড় রয়েছে। পূর্ব ও উত্তর পাশের পাহাড়গুলোতে সরকারি আকাশমণি বাগান রয়েছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের পাহাড়ে রয়েছে আগর বাগান। মইন্যার টেক এলাকায় কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের উত্তর পাশে ছোট একটি পাহাড় ছিল। ওই পাহাড়ে কয়েকটি শতবর্ষী মাদারট্রি ছিল। এ ছাড়া কাটার উপযোগী বেশ কিছুসংখ্যক আকাশমনি গাছ ছিল। এখন সেখানে টিকে আছে মাত্র একটি গর্জন গাছ। বাকি সব গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে চক্রটি। পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক অংশ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাহেদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী ওই মাটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগপন্থি দলের নেতা হওয়ায় বন বিভাগ তাদের কিছুই করেনি। ‘গা বাঁচাতে’ শুধু মামলা করে দায় সেরেছেন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পাহাড়খেকোদের সঙ্গে মিলেমিশে বিট অফিস পরিচালনা করেছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে পাহাড় কেটে সাবাড় করার এ ঘটনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. জাহেদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলাম। এ মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মো. আলমগীর, মোক্তার আহমেদ, মো. নুরু, আকবর হোসেন, মো. ফারুক, মো. রুবেল, মো. নুরুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদিন।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close