ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ভারতের সঙ্গে প্রকৃত টেকসই সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৫৯ এএম  (ভিজিট : ৩৮৮)
ঐতিহাসিক প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সত্যিকারের দীর্ঘস্থায়ী সুসম্পর্ক গড়তে চায় বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশের কোনো একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা দলের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক, ঢাকা এমন চায় না। ঢাকা চায় যে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারতের মানুষের সত্যিকারের সখ্য গড়ে উঠুক, দুই দেশের মধ্যে টেকসই সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।    
              
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে এমন বার্তাই দেওয়া হবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি বিরাজ করছে, টানাপোড়ন চলছে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো রকম অস্বস্তি চায় না। যে কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তুাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক অনুষ্ঠান চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত আসন্ন বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সম্পর্ক বজায় রাখতে নয়াদিল্লিকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হবে। আসন্ন বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা এবং তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া সংযোগ, জ্বালানি, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব ইস্যু নিয়েই কথা বলবে ঢাকা। অন্যদিকে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আসন্ন বৈঠকে সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে।

গত ১৬ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সোনালি অধ্যায় চলছে বলে সবাই বলত। প্রকৃত অর্থে এই সম্পর্ক ছিল শুধু বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যক্তিদের সঙ্গে ভারত সরকারের ব্যক্তিদের। যেখানে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সত্যিকারের সুসম্পর্ক ছিল না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই এটি দৃশ্যমান হয়ে ধরা দেয়। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। এরপর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য রাখেন। মাঝে সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে এবং ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ভারত ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে অতি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ভারতবিরোধী একাধিক কর্মকাণ্ড লক্ষ করা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ভারতবিরোধী এমন কর্মকাণ্ড চায় না। বাংলাদেশ চায় যে দুই দেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বিরাজ করুক।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অস্বস্তিকর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ভারতের। কিন্তু আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। এ বিষয়ে ভারতের যেমন কোনো অপশন নেই, তেমনই বাংলাদেশেরও কোনো অপশন নেই। আমরা অবশ্যই টানাপোড়ন দূর করার চেষ্টা করব এবং ওয়ার্কিং রিলেশন (কাজের সম্পর্ক) যেন হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করব।

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পট পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি ছায়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে পড়েছে। গত ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশে পরিবর্তনের পর সেই সম্পর্কেও ধাক্কা লেগেছে। আগের মতো দুই দেশের সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনতে একটু সময় লাগবে। কেননা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে ভবিষ্যতে দুই দেশকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সামনে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, আশা করি ওই বৈঠক থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি দূর করার পথ বের হবে। দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন করে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এই সময়ে ভারতকে ইলিশ দিয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে দুই কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এক, শেখ হাসিনার পতন। কারণ শেখ হাসিনার সময়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল। তার পতন হওয়ায় ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়েছে। দুই, সহিংসতা। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ধরনের অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে তা কারোরই কাম্য নয়। বঙ্গবন্ধু তো কোনো দোষ করেননি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার স্মৃতিতে সহিংসতা, আগুন, জ্বালাও-পোড়াও, শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ে ঢুকে পড়া ইত্যাদি যে বিষয়গুলো বাংলাদেশে এখন চলছে তা স্বাভাবিক নয়, এগুলো স্থিতিশীলতার লক্ষণ নয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে এখন একটা টানাহ্যাঁচড়া চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের সবাই বন্ধুত্বের জন্য ভারতের প্রতি হাত বাড়িয়ে রেখেছে। যে কারণে চলমান টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেও বাংলাদেশ ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছে। আমরা আগে থেকেই ধারণা করেছিলাম যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন না। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। কারণ হচ্ছে যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন বিশ্বব্যাপী পরিচিত একজন বিদ্বান ব্যক্তি, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি হচ্ছেন গোড়া একজন ধর্মীয় নেতা। বিগত ১৬ বছরে ভারত শুধু আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে। যে কারণে এখন সম্পর্কে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দোরাইস্বামী যখন বাংলাদেশে হাইকমিশনার ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন যে শুধু আওয়ামী লীগ আমলেই দুই দেশের সম্পর্ক ভালো থাকে। অস্বস্তি কাটাতে বল এখন ভারতের কোর্টে। অথচ এই মুহূর্তেও ভারতের মন্ত্রীরা বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করছেন, যা অনভিপ্রেত।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। বাংলাদেশের কেউ বৈরিতা চায় না। সামনে দুই পক্ষের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ভারত কী করে তা দেখার বিষয়। ভারত যতই কামড়াকামড়ি করুক, কিন্তু তাদের বাস্তবতা দেখা উচিত। ভারতের হাইকমিশনাররা আগে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া আর কারও সঙ্গে দেখা করতেন না, রোববার তাদের হাইকমিশনার বিএনপির সঙ্গে দেখা করেছেন, এটা ইতিবাচক। বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখলে ভারতই লাভবান হবে।


সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close