ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রশাসনে নিরপেক্ষ কর্মকর্তার আকাল
প্রকাশ: রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:১৩ এএম  (ভিজিট : ৪৭০)
সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে নিয়মিত চাকরি থেকে অবসরে না পাঠিয়ে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েক জন সচিবসহ দেড় শতাধিক কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একসময়ের এপিএস জাহাঙ্গীর আলমকে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব পদ থেকে বদলি করে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও বিতর্কিত এই সচিব এর প্রভাব কমেনি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের দাবি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ‘দলদাস’ অনেক কর্মকর্তা এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও জনপ্রশাসনে তাদের দোসররাই দোর্দণ্ড প্রতাপে কলকাঠি নাড়ছেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাবি সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে বঞ্চিত ত্যাগী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনকে আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো দলীয় প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা চালালেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনে দলীয়করণের কারণে নিরপেক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে বের করা কঠিন হচ্ছে। এ কারণে চারটি সচিব পদ বিভিন্ন সংস্থার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এখনও ফাঁকা রয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য বিস্তারের পর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ থাকা আলোচিত একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে একই দিনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে সহযোগিতা করেছিলেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ। এর পুরস্কার হিসেবে সচিব পদোন্নতি পেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সচিব হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা এখনও বহাল রয়েছেন। 

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সব কর্মকর্তার চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সচিবদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। টেকনিক্যাল পদ ছাড়া এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক  নিয়োগ বাতিল এবং নতুন করে ৩০ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত বেশ কয়েকজন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। বিকল্প যোগ্য লোক না পাওয়া পর্যন্ত টেকনিক্যাল পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাড়ে তিনশ’র বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। অনেকে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে ৭ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি বিধিমালা অনুসারে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে উপসচিব হিসেবে ৫ বছর এবং যুগ্মসচিব থেকে পদে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৩ বছর সন্তোষজনক চাকরির শর্ত রয়েছে। আর অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২ বছরের সন্তোষজনক চাকরির শর্ত থাকায় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যারা অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদেরকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। আর বিগত সরকার আমলে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পাওয়াদের অধিকাংশই সরকার ঘনিষ্ঠ সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ করেছেন এতদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তারা। যোগ্য কর্মকর্তা না পাওয়ায় এখনও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের পদের পাশাপাশি বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যানের (সচিব) পদও ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া মাঠপ্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী জনবলও পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ২ বছরের শর্ত শিথিল করে ১ বছর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবিও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। 

বিগত সরকার আমলের বিতর্কিত সুবিধাভোগী শীর্ষ কর্মকর্তারা এখনও বহাল থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। ‘সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এখনও আওয়ামী লীগের দোসররা বসে আছে’, মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের সরকারের বিভিন্ন স্তরে বসিয়ে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না। শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকার যাতে স্বস্তিতে কাজ করতে না পারে, তার জন্য একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে স্বৈরাচারের দোসররা। 

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, গত ১৫ বছর যেসব বিচারক ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে মানুষের অধিকার হরণে ভূমিকা পালন করেছেন, তারা এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এ বিষয় চলমান থাকলে জাতির কাছে ভুল বার্তা যাবে। শনিবার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতির দেওয়া অভিভাষণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। তাই যারা অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন তাদের পদোন্নতি দিয়ে অথবা যারা সচিব হিসেবে রয়েছেন তাদেরকে রদবদল করে সচিব পদ শিগগিরই পূরণ করা হবে। তিনি বলেন, যেসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে সেখানে নতুন করে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে চাকরিতে কর্মরত নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পদগুলো পূরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close