ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দুর্নীতিকে সিস্টেমে বেঁধে ফেলতে হবে
প্রকাশ: রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:২০ এএম  (ভিজিট : ৩৪৬)
এক বছর ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আলি আখতার হোসেন। এর আগে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে তিনি সুনামের সঙ্গে এলজিইডিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ৩৭ বছরের চাকরিজীবন শেষ করে আগামী মাসে অবসরে যাচ্ছেন। কর্মজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ, বর্তমান বাস্তবতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সময়ের আলোর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন এলজিইডির এই প্রধান প্রকৌশলী। গত মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে তার নিজ কার্যালয়ে সময়ের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সাব্বির আহমেদ এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। 

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলজিইডিতে সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে কি না-জবাবে প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন, সংস্কার অবশ্যই দরকার। আমরা যে গতানুগতিক ধারায় কাজ করে আসছি সামনে সেটির পরিবর্তন ঘটবে। টেকসই সমাধানের কথা মাথায় রেখে আমাদের কাজে ও সংস্থাগতভাবে সংস্কার দরকার। আমাদের স্বাধীনতা দরকার। পরিবর্তনযোগ্যতা দরকার। একইভাবে দায়িত্ববোধ, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি। এগুলো আমাদের ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করতে হবে। ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। সব মানুষকে একই রকমভাবে চিন্তা করাটা ঠিক হবে না। একেকজন একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কর্মপদ্ধতি একই রকম হলে মানুষ বদলাতে বাধ্য। সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের (পদ্ধতিগত উন্নয়ন) বিকল্প নেই। যেমন এলজিইডির ইজিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেম; যেখানে টেন্ডার হবে অনলাইনে। অফলাইনে টেন্ডারের কাগজপত্রে গরমিল করা যায়। কিন্তু অনলাইনে তা সম্ভব নয়। ইজিপিতে চাইলেও কোনো ম্যানুপুলেট (নিয়ন্ত্রণ) করা যায় না। এলজিইডিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে আলি আখতার বলেন,  আমাদের চার স্তরের মনিটরিং হয়ে থাকে। তবু উনিশ-বিশ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তির কারণে দুর্নীতি হয়ে থাকে। জেলা ইঞ্জিনিয়ার ভালো হলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বড় ধরনের দুর্নীতির সুযোগ নেই। মনিটরিংয়ের আপডেট টুলসগুলো ব্যবহার করতে পারলে অনিয়ম কমিয়ে আনা যাবে। এ জন্য অটোমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। দুর্নীতি সব দেশে সব জায়গায়ই ছিল। এটিকে সিস্টেমে বেঁধে ফেলতে হবে। মানুষকে মোটিভেট (উৎসাহ) করে কাজ হবে না। তিনি বলেন, এলজিইডির মতো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব সব সরকারের আমলেই থাকে। এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

আলি আখতার বলেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প আছে। যেখান থেকে তারা সারা দেশে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করে থাকে। অনেক জায়গায় নদী ও খালের মাঝখানে সেতু তৈরি করে, পরে এলজিইডির নামে চালিয়ে দেয়। সংবাদে এলেই মনে করা হয় এগুলো এলজিইডির তত্ত্বাবধানে করা। আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করছি। আর আমাদেরও কিছু এমন চিত্র আছে এর কারণ ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যা। সেতুর কাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেতু যথাসময়ে ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে না।

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হ্যাঁ বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন বন্যা অতীতে দেখা যায়নি। ওই অঞ্চলে পানি দ্রুত নেমে যেতে না পারার পেছনে রাস্তাঘাটগুলোও দায়ী। অপরিকল্পিত বসতির কারণে রাস্তার নেটওয়ার্কগুলো মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো মেরামতে তিন ধাপে কাজ করা হবে। প্রথম ধাপে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনে বিচ্ছিন্ন সড়কগুলো জরুরি মেরামত করছি। দ্বিতীয় ধাপে অগ্রাধিকারের সঙ্গে রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণ করা হবে। দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে আরও মজবুত করা যায় অর্থাৎ এই অঞ্চলের রাস্তাগুলোর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা। রাস্তার কাজের গুণাগুণ মান বাড়ানো। সহজে যাতে বানের তোড়ে একটি বড় অংশ ভেঙে যেতে না পারে। 

বাংলাদেশের রাস্তা পাকাকরণের হার সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, দুই কিলোমিটার অল-ওয়েদার (মহাসড়ক) সড়ক ঘিরে ওই এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ লোক বাস করে। যা এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) ১১.১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা আছে। আমরা তার আগেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। প্রথমে এলজিইডি মাটির কাজ শুরু করেছে। এরপর পাকাকরণ বাড়াতে থাকে। গ্রামে আমাদের সর্বমোট রাস্তা হলো সাড়ে তিন লাখ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। ১৬ লাখ মিটার ব্রিজ কালভার্ট স্থাপন হয়েছে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে। এগুলো আমাদের সম্পদ। এগুলো টেকসই করাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের জোগান দরকার। সরকার প্রতি বছর ভালো বাড়াচ্ছে, তবে আরও লাগবে। তিনি বলেন, অনেক রাস্তার বয়স ২০-২৫ বছর হয়েছে। এগুলো এখন মজবুত ও চওড়া করছি। এক লেনের রাস্তাকে দুই লেনে উন্নীত করছি। এক লেনের রাস্তায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুই লেনের ফলে উপজেলায় ট্রাফিক জ্যাম কমে আসবে।
আশির দশকের প্রথম দিকে লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো বা এলজিইবি হয়। এরপর এলজিইডি হয়। বলা যায় এটি নতুন সংস্থা। স্বল্প লোকবল নিয়েই শুরু করে। লক্ষ্য ছিল গ্রামের হাটবাজারের সঙ্গে রাস্তার যোগাযোগ স্থাপন করা। মূলত সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের প্রাধান্য দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। উৎপাদিত পণ্যে বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রসারিত করা। এলজিইডির যাত্রা প্রসঙ্গে প্রকৌশলী আলি আখতার জানান, এলজিইডি আসার আগে এই সুযোগ-সুবিধা একেবারেই ছিল না। আগে পণ্য উৎপাদনমুখী ছিল না। শ্রম বিক্রি করা যেত না। এক এলাকা থেকে সহজে অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারত না। এলজিইডি যোগাযোগব্যবস্থা সহজলভ্য করেছে। কোনো কোনো জেলাতে এক কিলোমিটার রাস্তাও পাকা ছিল না নব্বইয়ের আগে। জোর দিয়ে বলা যায়, গ্রামীণ অর্থনীতির রূপকার হচ্ছে এলজিইডি। অর্থাৎ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এলজিইডি।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close