ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হাসানের হতাশা
গুলিতে পা গেছে, কীভাবে দাঁড়াবেন পরিবারের পাশে
প্রকাশ: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৪৩ এএম  (ভিজিট : ২৮২)
মা-বাবাকে হারিয়ে দারিদ্র্যের কারণে মালবাহী ট্রাকের হেলপারি শুরু করেন মো. হাসান (৩১)। কয়েক বছর আগে বিয়ের পর তাদের ঘরে একটি কন্যাসন্তান আসে। অভাবের মধ্যেই সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। সেদিন চট্টগ্রাম থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর সংঘর্ষের কবলে পড়েন তিনি। জীবন বাঁচাতে গাড়ি থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে এবং হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যায়। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাঁটু পর্যন্ত পা কেটে ফেলতে বলা হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সেদিন অপারেশন করাতে পারেননি। পরে অনেক হাসপাতাল ঘুরে ২৫ জুলাই তার পা উরু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।

এক পা হারানো মো. হাসান সময়ের আলোকে বলেন, আমার মা-বাবা নেই। পরিবার বলতে স্ত্রী ও তিন বছরের ছোট একটি কন্যাশিশু। আমি ছিলাম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যা আয় করতাম তা দিয়েই চলত সংসার। দুর্ঘটনার পর উপার্জনের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। আমি কোনো কাজও করতে পারছি না। কারণ এখনও কাটা পা শুকায়নি। ফলে প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা যা দিচ্ছে তা দিয়েই জীবন চলছে। লাঠির ওপর ভর করেই চলতে হচ্ছে। শুনেছি সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কিছু দিচ্ছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সরকার বা সমন্বয়কদের থেকে কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। এ বিষয়ে না জানার কারণে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারিনি। আমার তিন বছরের মেয়েটির কী হবে, তা ভেবে পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমার মনে হয়েছে হয়তো আর বাঁচব না। চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে আসছিল। সেই অবস্থায় আমাকে গাড়ির ড্রাইভারসহ কয়েকজন দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে ঢামেকে আমাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। তাই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে ২৫ জুলাই আবারও ঢামেকে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল থেকে রেফার করে পাঠিয়ে অথেনটিক নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আমার অপারেশন করার মতো টাকা না থাকায় অনেক দিন দেরী হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পা কাটা হয়। আমার সম্বল বলতে একটা ঘর ও একটুখানি ভিটে আছে।

আহত হাসানের স্ত্রী ফারজানা আক্তার সময়ের আলোকে বলেন, গ্রামের মানুষ যা সাহায্য করছে তা দিয়েই সন্তানসহ অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চলতে হচ্ছে। আমার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য সরকারের কাছ থেকে সাহায্য কামনা করছি। যাতে অন্তত তার খাওয়া ও লেখাপড়াটা চলে। তিনি বলেন, হাসান গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারসহ স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমরা খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই। কিন্তু টাকার অভাবে ঠিকমতো তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। এ ছাড়া তখন পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে ঢামেকেও চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি। এখন চলার মতো কোনো অবস্থা নেই। ছোট একটি টিনের ঘরে কোনোরকম দিন পার করছি। বাকি দিন কীভাবে কাটবে বুঝতে পারছি না। অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো ঢাকা মেডিকেল যদি প্রথমে অপারেশন করত তা হলে হাঁটুর নিচে কাটলেই হতো। কিন্তু কিছু দিন দেরী হওয়ায় তার পায়ে পচন ধরে পোকা হয়। এর ফলে উরু পর্যন্ত কাটতে হয়েছে। টাকার না থাকায় তখন ডাক্তার অপারেশন করেনি। পরে এলাকা থেকে সাহায্য তুলে তার অপারেশন করা হয়। আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, খাবার কেনার মতো টাকাও নেই। তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে জীবন সংকটময় অবস্থায় যাচ্ছে।

আহত হাসানের স্বজনরা জানান, পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে গিয়েও অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে থাকা ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা করেননি। অবহেলার কারণে তার ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। অপারেশন করে তার পা কেটে ফেলতে বললেও টাকা না থাকায় অপারেশন করেননি। পরে সেখান থেকে কুমিল্লার দেবিদ্বার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন থাকার পর অবস্থা আরও অবনতি হতে থাকে। পরে আবারও ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানেও কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ঢামেকের মেঝে ও সিঁড়ির পাশে থাকতে হয়েছে তাকে। ডাক্তাররা তার অপারেশন করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে অথেনটিক নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অপারেশন করে তার পা কাটা হয়।

তারা আরও জানায়, আহত হাসানের পরিবারের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। অনেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় তালিকা হয়ে গেছে। এখন আর সম্ভব নয়। ফলে তার পরিবারের জন্য এগিয়ে আসার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তারা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। ছোট একটি শিশুকন্যাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সময়ের আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারাই আহত ও নিহত হয়েছেন প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে। সমন্বয়কদের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। এর ফলে সরাসরি আমরা তাদের জন্য কিছু করতে পারছি না। তবে যারা এখনও আমাদের তালিকার বাইরে রয়েছেন, খোঁজ পেলে পাশে থাকব। সরকার থেকে ইতিমধ্যে একটি ফান্ড গঠন করে সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে। যদি তালিকার বাইরে কেউ থাকে আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন। কারণ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তালিকা করার চেষ্টা করছি। তাই ভুল হতেই পারে। আমরা আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close