ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

তীব্র গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং, বিপর্যস্ত সিলেটের জনজীবন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:২৬ পিএম  (ভিজিট : ২৫৬)
সিলেটে তীব্র গরম আর লোডশেডিং অতিষ্ঠ জনজীবন। গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড তাপদাহ আর দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে সিলেটবাসীকে। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে না পেরে বিদ্যুৎ বিভাগও অসহায়। আর অসহনীয় তাপপ্রবাহের কারণে শিশু ও বয়স্করা মারাত্মক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে ৪০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই ৪০ শতাংশ লোডশেডিং সিলেটবাসীর নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।

সিলেট বিভাগে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২৩৪০ মেগাওয়াট। বিভাগের ৪ জেলায় বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে গড়ে ৪০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। নিয়মিতই বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় সিলেটে দিনের এক তৃতীয়াংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। দিনে ও রাতে সমানতালে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরবর্তী দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। লোডশেডিংয়ের কারণে রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হওয়া লেবুর শরবত, বিভিন্ন জুসের চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় সিলেটের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে এর। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরাও পড়েছে বিপাকে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ছোট ছোট শিশুরা ক্লাসে বেশ কষ্ট করছে। পাশাপাশি লোডশেডিংও রয়েছে। এ কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও গরমে ক্লাস নিতে কষ্ট করছেন। গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ৩৬/৩৭/৩৮ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা বইছে।

সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের ভ্রাম্যমাণ শরবত ব্যবসায়ী আবু খালেদ বলেন, গরমে লেবুর শরবতের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ট্যাং, ডাবের পানিরও চাহিদাও বেড়েছে। মানুষ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে, ১০/২০টাকায় এসব শরবত খাচ্ছেন।

সুবিদবাজারের আবু তাহের ও আজিজুর রহমান বলেন, আশ্বিন মাসে এমন অস্বাভাবিক গরম জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটা সীমিত। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন, তাদের রিকশা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ২০ টাকার রিকশা ভাড়া ৫০ টাকা পর্যন্ত চেয়ে বসছেন রিকশাচালকরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাইদ বলেন, সিলেটে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়েছেন। প্রচণ্ড গরমে সবাই কষ্ট পাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট-এর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির সময়ের আলোকে বলেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। যদি জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদামত বিদুৎ সরবরাহ করা হয় তাহলে লোডশেডিং কমে আসবে। বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষোভ বাড়ছে সিলেটে। বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছে। সিলেট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় একটা অংশ ৪০০ কেভি লাইনে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। ৪০০ কেভি লাইনের বিদ্যুৎ কলকারখানায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সিলেটে বিদ্যুতের লোড কম। সারাদেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪.৪ শতাংশ বিদ্যুৎ সিলেটে সরবরাহ করা হয়। লোড বাড়ানো হলে সিলেটে বিদ্যুতের লোডশেডিং কমে আসবে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে সাধারণত এপ্রিল-মে ও জুন এই মাস গরম থাকে। তবে অতীতের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সিলেটে সেপ্টেম্বর এমনকি অক্টোবর পর্যন্ত তীব্র গরম অনুভূত হয়েছে। এটি সিলেটের জন্য নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ ছিল। এটি চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। এটি যদি সিলেট পেরিয়ে যেতো, তাহলে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকতো।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসাইন বলেন, সিলেট আগামী কয়েকদিন গরম কমার সম্ভাবনা নেই। কয়েক জায়গায় বৃষ্টি হলেও গরম থাকবে। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হতে পাবে। অক্টোবরের শুরুর দিকে শীত নামতে পারে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  তীব্র গরম-ঘনঘন লোডশেডিং   বিপর্যস্ত জনজীবন   সিলেট বিভাগ  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close