রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙ্গালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অজ্ঞাত ১ জন পাহাড়ি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। উক্ত ঘটনায় নারী-শিশুসহ উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা হামলা-পাল্টা হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয় এবং প্রশাসন রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
পুলিশ, হাসপাতাল সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, খাগড়াছড়ির দিঘীনালার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, লুটপাট ও বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পাহাড়িরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি বনরূপা বাজারের পেট্রোল পাম্পের নিকট আসলে মিছিলকারীদের সাথে বাঙ্গালিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ি বাঙ্গালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বনরূপা, কাঠালতলী, কোর্টবিল্ডিং, রাজবাড়ী ও এর আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রের রূপ নেয়।
শান্তির শহর রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙ্গালি এ ভয়াবহ সংঘর্ষে অজ্ঞাত ১ জন পাহাড়ি যুবক নিহত হয় এবং উভয়পক্ষে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে দূর্বৃত্তরা অফিস পাড়াস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে প্রধান কার্যালয়, সীমান্ত ব্যাংক, সেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, টেলিটক কার্যালয়সহ বনরূপা বাজারে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করেছে বনরূপা মসজিদ ও কাঠালতলীস্থ মৈত্রী বিহারে। যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটি ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় শ্রমিকরা প্রায় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপে পরে তারা ব্যারিকেড তুলে নেয়। সেনাবাহিনী সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে আহতদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জেলা প্রশাসন রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এদিকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের তবলছড়ি বাজার ও আসামবস্তী এলাকায় পৃথক দুটি সন্ত্রাসী হামলায় ২ জন বাঙ্গালি ও ৩ জন পাহাড়ি গুরুতর আহত হয়েছে। এ হামলায় আহতদেরও রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যগণ ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় ৪ দফায় ৫৯ জনকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এদের মধ্যে ২৫ বছর বয়সী ১ জন পাহাড়ি যুবকের মৃত্যু হয়। মুমূর্ষু ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। ২১ জনকে ভর্তি রয়েছে। এবং ৩৫ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে মোটরবাইক চোর সন্দেহে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের পাহাড়ি গ্রামে স্থানীয়রা মো. মামুন নামে যুবককে পিটিয়ে খুন করে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে দিঘীনালা উপজেলা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বাঙ্গালি লোকজন। বিক্ষোভ চলাকালে পাহাড়ি লোকজনের সাথে বিক্ষোভকারীদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটে। সেই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটিতে পাহাড়িরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে পাহাড়ি-বাঙ্গালি সংঘর্ষ শুরু হয়। শান্তির শহর রাঙামাটি বর্তমানে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
রাঙামাটি জেনারেলের হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. সওকত আকবর খান এ প্রতিনিধিকে বলেন, অজ্ঞাত একজন পাহাড়ি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে জেলা কোর কমিটির জরুরি সভা ছিল। উক্ত সভায় সংঘাত-সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুর পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।