ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিস
ফুয়েল ছাড়া ফাইল চলে না যেখানে
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:৪৫ এএম  (ভিজিট : ৭৭৬)
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিস যেন ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে! শিক্ষক থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের দফতরি বা নৈশপ্রহরী পর্যন্ত ছাড় পান না উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের কাছ থেকে। প্রয়োজন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে ডেপুটেশনে শিক্ষক বদলি করেন তিনি। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে শেষ পর্যন্ত এ হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে এ ধরনের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নই। ১৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন টাকা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগদানের পর থেকেই মাতৃত্বকালীন, চিকিৎসা ও সাধারণ ছুটি দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিগত বছরে ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই লাখ টাকা করে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তারপর চেক হস্তান্তর করেন তিনি। টাকা না দিলেই শুরু করেন হয়রানি। সম্প্রতি উপজেলার ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। সেই টাকা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানোর কথা থাকলেও শিক্ষক সমিতির এক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সেই টাকা নগদ শিক্ষকদের হাতে হাতে বিতরণ করেন। এ টাকা বিতরণকালে শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে বিদ্যালয়প্রতি ৩৯০ টাকা করে কেটে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

পাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাহিদা আক্তারের চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর করার জন্য ৫ হাজার টাকা এবং দফতরি ও নৈশপ্রহরীদের বেতন বিলে স্বাক্ষরের জন্য ১২ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া শিক্ষকদের ঢাকায় যাওয়ার নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, সরকারি মোটরসাইকেল ব্যবহার না করা, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামতের নামে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ভুয়া বিল তৈরি করে আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে একজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে বদলি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

বাহাগুন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকেই কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। নিজের নিয়ম চালু করেছেন। অফিসিয়াল যত টাকা-পয়সা ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো না করে নিজের ইচ্ছামতো উত্তোলন করে নিজের মনমতো টাকা রেখে বাকিটা প্রধান শিক্ষকদের হাতে তুলে দেন।

ধানখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী আশরাফুল ইসলাম জানান, তার কাছে থেকে বেতন বিলে স্বাক্ষরের জন্য ১২ হাজার টাকা ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা। টাকা না দিলে বেতন বিলে স্বাক্ষর করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন নাসির উদ্দিন। বিষয়গুলো গণমাধ্যমের সামনে প্রচার করা হলে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা অফিসের লোকজন দিয়ে হয়রানি করা হয়। তাই মুখ খুলতেও পারেন না।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান বলেন, প্রাক-প্রাথমিকের টাকা ব্যাংক একাউন্টে দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের কথামতো শিক্ষকদের হাতে তুলে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভ্যাটও কেটে নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বরগুনা সদর উপজেলা থেকে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তিনি মেহেরপুরে গাংনীতে যোগদান করেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close