ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ
ডিজাইন ত্রুটির কারণে ব্যয় বাড়ল ৮০০ কোটি টাকা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৬৯০)
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। কিন্তু ডিজাইন ত্রুটির কারণে এ সম্প্রসারণ কাজের সিকি ভাগ এখনও সম্পন্ন হয়নি। উপরন্তু ডিজাইন ত্রুটির কারণে ব্যয় বেড়েছে ৮০০ কোটি টাকা। এই ত্রুটির দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য গত বছরের ৩১ আগস্ট কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রিপোর্ট। এই প্রকল্পের কাজ ঠিক কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছে না বেবিচক।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকায় এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও যাত্রীদের জন্য এক্সেলেটরসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে। এই মেগা প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। পরবর্তী সময়ে বর্ধিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৭ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখা যায় নকশায় ত্রুটি রয়েছে। তখন নতুন করে গত বছর এই প্রকল্পের নকশা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়। এ ছাড়া ত্রুটি না ধরে যারা এই নকশা বুঝে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের খরচ ৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। ২০২৫ সালে নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ডিজাইন ত্রুটি ধরতে না পারার সঙ্গে জড়িত বেবিচক কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিট গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় বেবিচক সদস্য (অর্থ) মো. আজিজ তাহের খানকে। কিন্তু এই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো কার্যক্রমই চালায়নি। এমনকি বেবিচক সদস্য মো. আজিজ তাহের খান বদলি হওয়ার পর বর্তমান (সদস্য, অর্থ) এসএম লাবলুর রহমান দায়িত্ব পান। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে এখনও কিছুই অবগত নন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া বিমান মন্ত্রণালয় থেকে এই ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইন প্রণয়ন ও পরামর্শকের কাছ থেকে যথাযথভাবে বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নামের তালিকা চাইলেও তা পাঠায়নি বেবিচক। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বহিঃবিমানবন্দর) ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (প্ল্যানিং অ্যান্ড কিউএস) নামসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক। এরপরও তা পাঠানো হয়নি।

জানা গেছে, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) কাজটি করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সিভিল ডিভিশন-৩-এর অধীনে কাজটি সুপারভিশন করা হয়। এই ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই এই প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ বিষয় উল্লেখ করে বেবিচককে একাধিক চিঠি দিয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে এই প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে দুজন যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাদের প্রকল্প সম্পর্কিত কারিগরি দক্ষতা ও যোগ্যতা ছিল না। তারা ছিলেন বিসিএস প্রশাসন (ক্যাডার) কর্মকর্তা। তাদের এভিয়েশন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কারিগরি জ্ঞান ছিল না। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইকাওর (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) অ্যানেক্স-১৪ সহ অন্যান্য রুলস রেগুলেশন ও এফএএর (ফেডারেশন এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অ্যাডভাইজরি সার্কুলার সংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। এ কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ২২ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এর আগে এই প্রকল্পের ডিরেক্টর ছিলেন পর্যায়ক্রমে দুজন যুগ্ম সচিব। এরপরে এখন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন বেবিচকের মওদুদুর রহমান। তিনি কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এসএম লাবলুর রহমান সময়ের আলোকে জানান, ছয় মাস আগে তিনি জয়েন করেছেন। তদন্ত কমিটির বিষয়ে কেউ তাকে অবহিত করেননি। এখন জেনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বেবিচক চেয়ারম্যানসহ আমরা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। নির্ধারিত সময় ২০২৫ সালে কাজ শেষ না হলেও বেশি সময় লাগবে না।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close