ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অর্থাভাবে বন্ধ চিকিৎসা
রাজধানীতে পুলিশের গুলিতে পা হারিয়ে নিঃস্ব পুঠিয়ার ইমরান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৩৬০)
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার মোল্লাপাড়া এলাকার সাতবাড়িয়া গ্রামের সহরাব আলীর ছেলে ইমরান হোসেন। ঢাকায় টপওয়ান নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তার জীবনে ঘটে যায় এক দুর্বিষহ ঘটনা। সেদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বরে কোনো যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ পুলিশের ছোঁড়া গুলি এসে লাগে ইমরানের ডান পায়ে। 

মিরপুর-১০ নম্বরে গুলি খেয়ে পড়ে থাকা ইমরানকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন মিরপুরের আলোক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সারিয়ে তোলা যায়নি ইমরানের ডান পা। অবশেষে কেটে ফেলতে হয়েছে সেই পা। 

এদিকে প্রায় ২০ দিন আগে ইমরানকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি চলে এসেছেন বাড়িতে। পা হারিয়ে বেকার জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইমরানের এমন পরিস্থিতিতে চলছে না সংসার। বন্ধ আছে তার চিকিৎসাসেবাও। এতদিন ধারদেনা করে চিকিৎসা চালালেও এক পা হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ইমরান ও তার পরিবার। 

পা হারানো ভুক্তভোগী ইমরান হোসেন বলেন, জুলাই মাসের ১৯ তারিখে বাইরে আন্দোলন চলছিল বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। অফিস শেষ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর-১১ নম্বর থেকে গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরে পৌঁছাতেই দেখি ছাত্ররা আন্দোলন করছেন। সে সময় হঠাৎ মনে হলো আমার পায়ে কেউ যেন ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করল। কিছুক্ষণ পর দেখি রক্তে ভিজে গেছে। পরে বুঝতে পারলাম আমার পায়ে গুলি লেগেছে। আমার সামনেও আরও কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ঢাকায় চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এখানে আমার সংসারও চলছে না, আবার চিকিৎসা সেবাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। এতদিন কাছে থাকা কিছু টাকা ও ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর পারছি না। চিকিৎসা চালাতে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি সহায়তার জন্য আবেদনও দিয়েছি। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে আপনারা বাঁচান।

ইমরান হোসেন আরও বলেন, আমি ভাবতেই পারি না যে, আমার পা নেই। মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসি। আমার হাত যখনই ডান পায়ের দিকে যায় তখন আমার কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে দেখতেও আসেনি। ছাত্র আন্দোলন অথবা সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি। কোনো চিকিৎসাসেবাও দেয়নি। আমি চাই আমাকে সরকার সাহায্য করুক। তা না হলে আমার ভবিষ্যৎ জীবনে স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং অসহায় পিতাকে নিয়ে পার করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।

পুলিশের গুলিতে পা হারানো ইমরানের বাবা সহরাব আলী বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলি লেগে পা হারিয়েছে। আমার সংসার শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে আপনারা সবাই সহায়তা করে তাকে চিকিৎসা দিন।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন পেয়েছি। সেই আবেদন আমি ডিসি অফিসে পাঠিয়েছি। সরকার বর্তমানে শহিদদের তালিকা করছে। পরবর্তী সময়ে আহতদের তালিকা করার সময় বিষয়টি দেখা যাবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close