ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের পরামর্শ
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:১০ এএম আপডেট: ১৬.০৯.২০২৪ ৮:২৮ এএম  (ভিজিট : ৪৮৪)
ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ লক্ষ্যে ৬টি কমিশন গঠন করার পর কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আসছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সংস্কারের যেসব দাবি উঠছে তার অন্যতম হচ্ছে জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর পরামর্শও দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। বিশেষ করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের পরিকল্পনার কথা বললে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলাচনা শুরু হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের প্রায় সব দেশ এবং পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিশ্বের প্রায় ৯৯টি দেশে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালু করা গেলে নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য কমে আসবে। বর্তমানে জাতীয় সংসদে মোট আসন ৩৫০টি। এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচন হয় ৩০০টিতে এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন বিলুপ্ত করে এবং সরাসরি নির্বাচনের ৩০০টি আসন থেকে ৫০টি কমিয়ে মোট ১০০টি আসন রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে। অর্থাৎ ২৫০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং ১০০টি আসন ভোটের সংখ্যা অনুযায়ী দলগুলো পাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো দল ১ শতাংশ ভোট পেলে একটি আসন পাবে। তা হলে সংসদে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে এবং সংসদ আরও বেশি প্রাণবন্ত ও কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে মাত্র কয়েক শতাংশ ভোট কম-বেশি হওয়ার কারণে সংসদে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হবে না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু বাম দল সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ ছাড়া সম্প্রতি বিদায়ি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও এ পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের। শুধু দলকে ভোট দেওয়া ছাড়াও ‘দলের তালিকা’ পদ্ধতিতেও ভোটাররা দলের প্রার্থী নির্ধারণ করার সুযোগ পান। এ পদ্ধতিতে দলগুলো তাদের প্রার্থী তালিকা দিয়ে দেয়। ভোটাররা দল পছন্দ করার পাশাপাশি দলের কোন প্রার্থীকে চান সেটাও পছন্দ করে দিতে পারেন। অনেক দেশে মিশ্র পদ্ধতিও চালু আছে। এ পদ্ধতিতে মোট আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নির্বাচিত হয় সরাসরি সাধারণ পদ্ধতিতে আর বাকি ৫০ শতাংশ নির্বাচিত হয় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ভোটিং ব্যবস্থায়।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ পেয়ে বিএনপি আসন পেয়েছিল ১৯৩টি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি আসন পেয়েছিল। অথচ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু থাকলে ওই নির্বাচনে বিএনপি ১২২টির কাছাকাছি এবং আওয়ামী লীগ কমপক্ষে ১২০টি আসন পেত। একইভাবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল এবং বিএনপি ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছিল মাত্র ৩০টি। ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন পদ্ধতি থাকলে বিএনপি আসন পেত কমপক্ষে ৫৭টি। 

মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবির বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন হওয়া দরকার। আনুপাতিক হারে চিন্তা না করলে জবাদিহিমূলক সংসদ হবে না। এ ছাড়া একটি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষে এমন ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া উচিত, যারা স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন করতে চাইবে না। যারা বিতর্কের ঊর্ধ্বে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে এ ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি রাজনৈতিক দল ২২ শতাংশ ভোট পেয়ে এবং অবশিষ্ট ৭৮ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ব্যতিরেকেই সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করতে পারে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে ৬০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ছাড়া কেবল ৪০ শতাংশ ভোটারের সমর্থনেই ৩০০টি আসন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ১০০ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে সরকার গঠিত হোক বা না হোক, ১০০ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে সংসদ গঠিত হবে। এই পদ্ধতিতে নির্বাচনি অনিয়ম হ্রাস পাবে। নির্বাচনি ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের নির্বাচন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। নির্বাচন মানে বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। তাই বিকল্প থাকতে হবে। তবে সেটাও হতে হবে যথার্থ বিকল্প। বিকল্প থেকে যাতে মানুষ ভিন্নমত, ভিন্নপথ বেছে নিতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন, তারা বিতর্কিত হন। তাদের নিয়ে যারা সরকার গঠন করবে তারা জনগণের শাসন নিশ্চিত করবে না। এর প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন জালিয়াতির মাধ্যমে একতরফাভাবে হওয়ায় সেগুলো গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছিল না। সুজন সম্পাদক বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি হবে কি না সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বাম দলগুলোসহ অনেকেই আলোচনা করছে। আবার দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে কি না তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে এটা করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও কিছু পরিবর্তন আনা হবে। কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না কি নির্দলীয় হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার বর্তমানে মেয়র ও চেয়ারম্যান সর্বস্ব। এটাকে সংসদীয় পদ্ধতির মতো করা যায় কি না সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা করতে হবে। স্থানীয় এবং জাতীয় সব নির্বাচনের বিষয়ে সুপারিশ থাকবে কমিশনের প্রতিবেদনে।


সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close