ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দেশজুড়ে টানা বর্ষণ
জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৪২ এএম  (ভিজিট : ২০৬)
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধ সৃষ্টি হওয়াসহ কোথাও কোথাও আবার বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বন্যামুক্ত হতে না হতেই টানা দুদিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে জেলাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারী বর্ষণে আবারও প্লাবিত জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে খুলনার নিম্নাঞ্চল। মোংলায় অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘরসহ তলিয়ে গেছে শত শত চিংড়ি ঘের। বৃষ্টির পানিতে যশোর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের প্রায় ৩০টি সড়ক। সময়ের আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনায় তলিয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘরবাড়ি : খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানি দ্রুত সরে যেতে না পারায় দুর্ভোগে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে এ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পে গত ছয় বছরে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) খরচ করেছে ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে পুনঃনিমিত হয়েছে ১০৪টি ড্রেন। সংস্কার চলছে আরও ৪২টির। পুনঃখনন করা হয়েছে ময়ূর নদসহ সাতটি খাল। কিন্তু এত বিপুল অর্থ খরচের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। গত শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টি একনাগাড়ে চলছে রোববার সারা দিন। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এ সময়ের মধ্যে খুলনায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার। 


গত শনিবার বিকালের বৃষ্টিতেই শহরের নিচু এলাকাগুলো আগেভাগে ডুবে যায়। রাতের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। নগরীর রয়েল মোড়, কেডিএ অ্যাভিনিউ, বয়রা বাজার, মুজগুন্নী পার্ক, বাস্তহারা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড ও চানমারি বাজার এলাকার প্রায় পুরোটাই ডুবে ছিল। কেসিসি এলাকার মোট সড়ক আছে ১ হাজার ২১৫টি। টানা বৃষ্টিতে নেভি চেকপোস্ট, রায়েরমহল, বয়রা বাজার, গল্লামারি, ময়লাপোতা, টুটপাড়া জোড়া কল বাজার, মহির বাড়ির খালপাড়, নতুন বাজার, ফুলবাড়ী গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, নতুন রাস্তা মোড়, আলমনগরসহ খুলনা শহরের বেশিরভাগ এলাকার সড়ক এখন পানির নিচে। এ ছাড়া বাইতিপাড়া, কেডি অ্যাভিনিউ, ডাকবাংলা ও রায়ের মহলের কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি।

খুলনার খালিশপুর এলাকার মো. মহাসিন বলেন, এ রোডে আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমত। এ জন্য ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ করে সড়কের দুই পাশে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয় এক বছর আগে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয় করে সংস্কার হয় সড়ক। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, আজও খুলনায় সারা দিন বৃষ্টি হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামানও বলেন, শুধু ড্রেন নির্মাণ করলেই হবে না এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম। সঠিকভাবে তদারকির অভাবে বিপুল অর্থব্যয় কাজে আসছে না।

জানতে চাইলে কেসিসির প্রধান কনজারভেন্সি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করি। এ ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে প্রকল্পগুলো চলছে, সেগুলো এবং খাল খননের কাজ শেষ হলে এ জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না।

দুদিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে আবার জলাবদ্ধতা : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বন্যার পর টানা দুদিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। এতে নতুন করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। যেসব সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি সরে গিয়েছিল, ফের বর্ষণে সেগুলোর বেশিরভাগই আবার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। জেলা শহরের বেশিরভাগ সড়কই আবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

মাইজদী হাউজিং এলাকার আজাদ হোসেন বলেন, পানি মোটামুটি নেমে গিয়েছিল। কিন্তু দুদিনের বৃষ্টিতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ পানি সরতে সময় লাগবে। লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার এজাজ আহমেদ বলেন, শহরের পানি নিষ্কাশনের পথগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন করেছেন। এখন পানি নামার পথ রুদ্ধ।

নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ২১ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি ছিল। গত কয়েক দিন রোদ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করে। এতে অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যায়। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কমে প্রায় ১২ লাখে দাঁড়ায়। একইভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার থেকে কমে ৩৫ হাজার ৪৪১ জনে নেমে এসেছিল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নতুন বৃষ্টিপাতে সে সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, দুদিনের বৃষ্টিতে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। পানি কমায় যারা বাড়ি ফিরেছিলেন, তারা ফের সংকটে পড়েছেন। এরই মধ্যে ফের তিন হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলায় ৩২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন প্রায় ৪০ হাজার বানভাসি আছে। তাদের জন্য সরকারিভাবে চাল, নগদ টাকা ও শিশুখাদ্য দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে ফের বন্যার আশঙ্কা : রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এতে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন পানি কমলেও ভারী বর্ষণের কারণে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পানি। এতে পানিবন্দি ও বানভাসিরা আতঙ্কে রয়েছে। এদিকে আবারও বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।

জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে আবারও জলাবদ্ধতা ও বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

রামগতি ও কমলনগর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, উপজেলা দুটির ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজারের বেশি বানভাসি মানুষ এখনও আছে।
রামগতি উপজেলার করিম মিয়া জানান, প্রথম বন্যায় আমনের মাঠ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমার পর ধার-দেনা করে আবার চারা রোপণ করেছি। এখন আবার টানা বৃষ্টির কারণে আমনের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা হলে সব আশা শেষ হয়ে যাবে। ধারের টাকা কীভাবে শোধ করব?

রামগতি উপজেলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ সোহরাব হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে রামগতি-কমলনগর আবারও বন্যার কবলে পড়ছে। জলাবদ্ধতা থাকায় পানি বেড়ে গেছে।

মোংলা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত : মোংলা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে রোববারও মোংলা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। এর ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে বন্দরে অবস্থানরত সব দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যবোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ। তবে সারবাহী কয়েকটি জাহাজের পণ্য খালাসের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দরের হারবার বিভাগ।

এদিকে তিন দিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা মোংলা শহর ও শহরতলিজুড়ে বন্যা পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। ফলে পৌর শহর ছাড়াও উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পৌর বাসিন্দারা বলছেন, টানা বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা যেন বন্যার আকার ধারণ করেছে। মূলত পানি নামার কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই আমাদের ডুবে থাকতে হচ্ছে।

অন্যদিকে অতি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সাতশরও বেশি চিংড়ি ঘের। ঘের তলিয়ে মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ি চাষিরা।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এ বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার চিলা ইউনিয়নের চিলা ও জয়মনি এবং বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা ও বিদ্যারবাহন এলাকায়। প্রাথমিক খোঁজখবর বিভিন্ন এলাকার সাত শতাধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এর সংখ্যা আরও হয়তো বাড়বে।

মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, নিম্নচাপটি ঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই, বৃষ্টিপাত হয়ে দুর্বল হলেই বিলীন হয়ে যাবে। তবে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি কমে আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

বরিশাল নগরীর বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পানি : বরিশাল ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালে শুক্রবার বিকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরীর বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে ১৯২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে নগরীর সদর রোড, ভাটিখানা, কাউনিয়া, বগুড়া রোড, বটতলা, গোরস্থান রোড, পলাশপর, আমানতগঞ্জ, কলেজ অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতে সড়কে পানি জমে আছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে নগরীর অনেক পুকুর তলিয়ে গেছে পানিতে; পুকুরে থাকা মাছ এখন সড়কে জমে থাকা পানিতে।

একই অবস্থা কির্তনখোলা নদীর পারের এলাকা পলাশপুরের রোমানা বেগম নামের এক গৃহিণী জানান, টানা দুদিনের বৃষ্টিতে এরই মধ্যে হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো এলাকা। আমার রান্না ঘরেও পানি উঠে গেছে; এ অবস্থায় রান্না করার মতো কোনো অবস্থা নেই।

নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম না করায় বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর মুষলধারে বৃষ্টি চলতে থাকলে জলাবদ্ধতায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করলেও কোনো নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, বৃষ্টির আগেই সিটি করপোরেশনের উচিত নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা।

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও দুয়েক দিন এভাবে বৃষ্টি হতে পারে। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে ১৯২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে আরও দুয়েক দিন বৃষ্টিপাত হবে।

মুষলধারের বৃষ্টিতে যশোর শহর ও শহরতলি প্লাবিত : নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, যশোরে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। মুষলধারের বৃষ্টিতে শহর ও শহরতলি প্লাবিত হয়েছে। ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও শহরের অনেক নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয় ও জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যশোর জেলার ১৪০ হেক্টর জমির আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত। শনিবার বিকাল থেকে রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত যশোরে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এতে যশোর পৌর শহরের কয়েকটি নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

রোববার সকাল থেকে শহর ঘুরে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে যশোর পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ৩০টি সড়ক। এর মধ্যে শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

এদিকে টানা ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যশোর জেলায় বিভিন্ন এলাকার আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, শনিবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে যশোর জেলার ১৪০ হেক্টর সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত শতকরা ২৫ ভাগ কৃষিজমি ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা দেশে মোট সবজি চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ সবজি এ যশোর জেলা থেকে চাষাবাদ করে সরবরাহ করে কৃষকরা।

যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এই ধারা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।

মাদারীপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে গত তিন দিনের বৃষ্টিতে শহরের অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে জনজীবন দুর্ভোগে পড়েছে। এ ছাড়াও বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় কয়েকটি বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। রোববারও গত দুদিনের মতো সকাল থেকেই টানা বৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তাঘাটে মানুষজন তেমন একটা দেখা যায় না।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মাদারীপুরে ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনের বৃষ্টিতে শহরের অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এমনকি শহরের অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় ঘরেও ঢুকে পড়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। শহরের কালিবাড়ি সড়ক, ইউআই স্কুল সড়ক, ফুড অফিসের মোড়, নিরাময় হাসপাতাল রোড, বাদামতলা রোড, শহিদ মানিক সড়ক, তরমুগরিয়া, শহিদ বাচ্চু সড়ক, পাবলিক লাইব্রেরি রোডসহ বিভিন্ন সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

মাদারীপুর পৌরসভার সচিব খন্দকার আবু আহম্মেদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কয়েকটি সড়কে পানি জমেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, তাই বৃষ্টির পানি নামতে সময় লাগছে।

মাদারীপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ মিলিমিটার ও তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ মিলিমিটারসহ দুদিনে মোট ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ : গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা ও যমুনা নদী উত্তাল থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. সগীর মিয়া। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী উত্তাল হয়ে প্রচণ্ড ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ গত শনিবার বিকাল থেকে এই নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এই নৌরুটে ৮টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close