প্রকাশ: রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:৫৪ পিএম (ভিজিট : ২৮৬)
টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে বন্যা পরবর্তীতে নোয়াখালীতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। এতে নতুন করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন বলে জানা গেছে। নতুন করে বর্ষণের কারণে যেসব সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি সরে গিয়েছিলো, সেগুলোর বেশির ভাগই আবার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। জেলা শহরের বেশির ভাগ সড়কই আবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি না হওয়ায় ও টানা রোদ থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিলো। তবে জেলার আটটি উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। তার মধ্যে শুক্রবার থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। শুক্রবার রাতভর ও শনিবার সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় বানভাসিদের মাঝে নতুন করে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ঘরে এসেছিলো তারা আবার সংকটে পড়েছে।
মাইজদী হাউজিং এলাকার আজাদ হোসেন বলেন, পানি মোটামুটি নেমে গিয়েছিলো। কিন্তু দু’দিনের বৃষ্টিতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই পানি সরতে সময় লাগবে।
সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ইকবাল হোসেন বলেন, নতুন করে আবার পানি উঠায় আমরা সংকটে পড়ে গেলাম। রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
লক্ষীণারায়নপুর এলাকার এজাজ আহমেদ বলেন, শহরের পানি নিষ্কাশনের পথগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন করেছেন। এখন পানি নামার পথ রুদ্ধ। শহরের পানি নামার প্রধান পথ ছাগলমারা খাল প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে করে জলাবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিয়েছে।
হরিনারায়ণপুর এলাকার একরামুল হক বলেন, পানি নামার যে সব পথ বন্ধ রয়েছে, তা অপসারণ করতে হবে। তা না হলে এই জলাবদ্ধতা সহজে যাবেনা। বৃষ্টি হলে ভোগান্তিও শেষ হবেনা।
মাইজদী বাজারের আহসান উল্যাহ বলেন, কয়েকদিন হলো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এসেছি। আবার ভারী বৃষ্টিতে পানি উঠে গেছে বাড়ির উঠানে। মনে হচ্ছে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে।
সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ২১ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী ছিলো। গত কয়েক দিন রোদ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করে। এতে অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যায়। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা কমে প্রায় ১২ লাখে দাঁড়ায়। একইভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার থেকে কমে ৩৫ হাজার ৪৪১ জনে নেমে এসেছিলো। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নতুন বৃষ্টিপাতে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিতে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। পানি কমায় যারা বাড়ি ফিরে গেছেন, তারা নতুন করে সংকটে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যারা পুনরায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চান, তাদের আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিন হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলাতে ৩২৮ টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন প্রায় ৪০ হাজার বাসনভাসি আছে। তাদের জন্য সরকারীভাবে চাল,নগদ টাকা ও শিশু খাদ্য দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সময়ের আলো/আরআই