প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৪৯ পিএম (ভিজিট : ৩০৪)
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীতে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। এতে করে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন পানি কমলেও ভারী বর্ষণের কারণে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পানি। এতে পানিবন্দী ও বানভাসিরা আতঙ্কে রয়েছে। এদিকে আবারও বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে আবারও জলাবদ্ধতা অথবা বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ভারী বর্ষণের কারণে অনেক নিচু অঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠে গেছে। এতে করে আবারও বিড়ম্বনায় পড়েছে মানুষ। বসতঘরের সামনে পানি ওঠায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে আছেন। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজারের বেশি বানভাসি মানুষ এখনো আছে।
সদর উপজেলার কাদরহানিফ ইউনিয়নের হেলাল বলেন, বৃষ্টির কারণে আবারও পানি বেড়েছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দুর্ভোগ আবারও বাড়বে।
সুবর্নচর উপজেলার সিরাজ মিয়া জানান, এক বন্যার রেশ না কাটতেই আবার বন্যা। প্রথম বন্যায় আমনের মাঠ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমার পর ধার-দেনা করে আবার চারা রোপণ করেছি। এখন আবার টানা বৃষ্টির কারণে আমনের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা হলে সব আশা শেষ হয়ে যাবে। ধারের টাকা কিভাবে শোধ করবো?
জেলা শহরের ভুলুয়া কলোনির আহসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়িতে এসেছি। ঘর গুছিয়ে বসবাসের উপযোগী করেছি। তারপরও বাড়ির চারপাশের কাঁদা থ্যাকথ্যাকে পরিবেশ ঠিক হয়নি। আবার বৃষ্টি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি। ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ মা। আবার যদি ঘরে পানি উঠে আসে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাবো।
জলিল নামে একজন বলেন, গত কয়েকদিন টানা রোদ থাকায় সড়কে পানি একদম ছিল না। একরাতের বৃষ্টিতে রাস্তা এবং বাসাবাড়িতে আবার পানি উঠেছে। মনে হচ্ছে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। মানুষ আবার ঘরবন্দী হয়ে পড়বে।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে।
হাতিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিণ্টন চাকমা বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় হাতিয়ার প্রায় ১০টির বেশি ট্রলার ডুবে গেছে। অনেক জেলে নিখোঁজ আছে। হাতিয়ার সাথে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কেউ হাতিয়ায় আসতে পারছে না আবার যেতেও পারছে না।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে নোয়াখালী আবারও বন্যার কবলে পড়ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ রাখছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। জলাবদ্ধতা থাকায় পানি বেড়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি।
সময়ের আলো/আরআই