ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান
অপকর্মকারীদের ফিরিস্তি পাঠানো হচ্ছে লন্ডনে
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:১০ এএম  (ভিজিট : ৪০৪)
শোকজ, বহিষ্কার ও মামলা দেওয়ার পরও থামানো যাচ্ছে না বিশৃঙ্খলা। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল ও আওয়ামী সুবিধাভোগীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

এসবের তালিকা করে দলের অপকর্মকারীদের ফিরিস্তি পাঠানো হচ্ছে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। একই সঙ্গে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিগত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের নেতারা এসব তালিকা করছেন। যেখানে বেশিরভাগ বড় পদধারী নেতাদের নামে বিস্তর অভিযোগ উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত কয়েক দিনে সময়ের আলোর হাতে একাধিক চিঠি এসেছে-যেখানে কোনো নেতা গত ৫ আগস্টের পর থেকে কী কী অপকর্ম করেছেন তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘চাঁদপুর সমাচার’ নামে চিঠিতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে মোটা দাগে ১৯টি অভিযোগ এনেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সভাপতি মানিককে কোথাও সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি রাতে চাঁদপুর আসেন এবং পরদিন থেকে সরাসরি তার নির্দেশে দখল বাণিজ্য ও জোরপূর্বক অর্থ আদায় শুরু হয়। এমনকি ২৮ অক্টোবর ২০২৩-এর পরে আন্দোলনে একবারও চাঁদপুর আসেননি সভাপতি। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে খাস জমি ও বালুমহাল দখল, বাসস্ট্যান্ড দখল, পেট্রোল পাম্পে হামলা ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া উল্লেখযোগ্য। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মানিক। 

তিনি সময়ের আলোকে বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানোয়াট। তৃতীয় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি ১ আগস্ট থেকে এলাকায় রয়েছি। 

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দিতে রাজি হননি। তার বক্তব্য-কেন্দ্রীয় নেতারা ভালো জানেন, তিনি মাঠে সক্রিয় নাকি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। 

এর আগে চাঁদপুরের পৈতৃক সম্পত্তি বেহাত হওয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত একটি গোষ্ঠী তাদের পৈতৃক সম্পদ জবরদখল করেছে। জুলকারনাইন সায়ের খান সামির এই অভিযোগের পর চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে শোকজ করে দলটি। জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানিকের বিরুদ্ধে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ তোলেন, সেটি তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তিনি মানিককে শোকজের নির্দেশ দেন। শুধু চাঁদপুর নয়- ভোলা, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার তৃণমূল নেতারা দলের সুবিধাবাদী, নিষ্ক্রিয় ও অপকর্মকারীদের তালিকা করে দফতর সেলে জমা দিচ্ছে।

জানা গেছে, দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারিসহ নানা অপকর্মে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বিশেষ সেল করেছে বিএনপি। সেলের রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে যত ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটিই প্রশ্রয় দেয়নি বিএনপি। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে তাদেরকেই দল থেকে শোকজ, ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক না হলে করা হয়েছে বহিষ্কার। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকেই করা হয়েছে মামলা। ইতিমধ্যে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি এজাহারও দায়ের করা হয়েছে। দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার কিংবা পদ স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া অনেককে শোকজ করা হয়েছে। এ তালিকায় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার সাধারণ মানুষকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এখলাছুজ্জামান ভূঁইয়া ও যুবদলের তিন নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট বার্তা-কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, অনৈতিক, অপকর্ম, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। সে দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতাই হোক না কেন। যারাই অপকর্মে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে দলের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু শোকজ আর বহিষ্কারই নয়, সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি পদক্ষেপও।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজকারীরা আওয়ামী লীগ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী। এখনও বিএনপির নামে এই চাঁদাবাজি, বিভিন্নরকম কথা আসছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এরা কিন্তু বিএনপি নামে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন লোকজন। এখন নতুন কাউকে দলে প্রবেশ না করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এরা আওয়ামী লীগের, এরা এখন দলে ঢোকার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাংগঠনিক সফরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা পরিহার করতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের ওপরে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে এলাকায় এলাকায় এমন চিত্র কমতে শুরু করেছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close