ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

২৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পে স্থবিরতা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:২২ এএম  (ভিজিট : ৩০২)
কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে নেওয়া ২৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ অধিদফতরের ২৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিন বছরের প্রকল্প ৭ বছরে ঠেকলেও অল্পবিস্তর জমি অধিগ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। এখন এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দাফতরিক নির্দেশনার অপেক্ষায় বেশকিছু প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রকল্পগুলোতে ধীরগতির পেছনে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা আর অবহেলার কারণেই কারিগরি অধিকাংশ প্রকল্পই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না। 

তবে প্রকল্প পরিচালকদের দাবি, ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।  
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় পাঁচটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। ৩২৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর চার বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনে ১ হাজার ২২২ কোটি, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পে ৪০২ কোটি এবং দেশের ১০০টি উপজেলায় একটি টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। 

সম্প্রতি আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন তথ্য বলছে, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে প্রকল্পটির অনুমোদন ২০১৮ সালে নেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বর্ধিত এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এতে তিন বছরের প্রকল্প গিয়ে ঠেকেছে ৭ বছরে। কিন্তু প্রকল্পের কাজের যে অগ্রগতি তাতে সংশোধিত মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে ধীরগতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় এখনও শুরু করা যায়নি পূর্ত ও ক্রয় কাজ। 

একই চিত্র দেখা যায় কারিগরির ৩২৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পেও। প্রকল্পটির সাড়ে তিন বছর পেরুলেও মাত্র ১২টির জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। 

এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক ড. মশিউর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ১২টির ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আর ৬টির ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর-এ চার বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের প্রকল্পেরও একই দশা হয়েছে। তিন বছরের প্রকল্পটিতে ভূমি অধিগ্রহণেই লেগেছে ৫ বছর। ছয় বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। প্রতি বছর বড় ধরনের বরাদ্দ দিলেও খরচ করতে পারছে না প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়সাল মুফতী বলেন, আমাদের সবগুলোর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনিক ভবনের বেজমেন্টের কাজ চলছে। একই অবস্থা সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পেও। ছয় বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। 

অন্যদিকে ১০০ উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন প্রকল্পের কাজের ১০ বছরে প্রায় ৭৬ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে জানা গেছে। বেশকিছু ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুলের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পটির পরিচালক আবুল কাশেম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, সারাদেশে কাজ করতে হলে একটু সময় লাগবেই। তারপরও আমার মনে হয় কাজের অগ্রগতি ভালো। প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। 

অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের আওতায় প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, শুধু কারিগরির প্রকল্পই নয়, সব মেগা প্রকল্প আবার খতিয়ে দেখা হবে। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে কোন প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, এর অর্থনৈতিক আউটপুট কতটা হতে পারে, সেটা পুনরায় বিবেচনা করা হবে।

এসব মেগা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবো। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে জনবান্ধব ও জনকল্যাণের স্বার্থে যেসব প্রকল্প রয়েছে আমরা সেগুলোকেই প্রাধান্য দেবো। 

প্রকল্পগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকল্প মূল্যায়নে সঠিক সম্ভাব্যতা যাচাই না হলে সেগুলোর বিষয়ে অবশ্যই নতুন সিদ্ধান্ত আসবে। এমনকি প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিলে সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত জাতীয় মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমেই নেওয়া হবে।

পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশ শ্রমিক অধিকার একশতে একশ নিশ্চিত করতে পারেনি। আমাদের এখানে রাতারাতি সব সমস্যা সমাধান সম্ভব না। শ্রমিকদের অনেক দাবি যৌক্তিক। মালিকরা চাইলে পূরণ করতে পারেন। আবার কিছু দাবি এখনই বাস্তবায়ন যৌক্তিক না। ন্যূনতম মজুরি এখনই দ্বিগুণ করার দাবি বাস্তবসম্মত কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close