ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মক্কা অভিযানের গোপন চিঠি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম  (ভিজিট : ৩০৮)
ষষ্ঠ হিজরি সনে মক্কার কাফেরদের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর একটা সন্ধি হয়। ইতিহাসে যেটা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধি হওয়ার পর মুসলমান এবং কাফেরদের মধ্যকার সব যুদ্ধ বন্ধ থাকে প্রায় দুই বছর। কাফেররা এক পর্যায়ে গিয়ে সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ এবং মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। তখন অষ্টম হিজরি সনে রাসুল (সা.) কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) সবাইকে অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং এমন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন, যাতে প্রস্তুতির সব খবর গোপন থাকে। কাকপক্ষীও যেন জানতে না পারে। এরপর তিনি মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করার ঘোষণা দিলেন। সবাইকে তৈরি থাকার ও রসদপত্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! কুরাইশদের কোনো গুপ্তচর কিংবা সংবাদবাহক যেন এই খবর সংগ্রহ না করতে পারে, তার ব্যবস্থা তুমি করে দাও। যাতে আমরা হঠাৎ করে সেখানে গিয়ে হাজির হতে পারি।’

হাতেব বিন আবি বালতা নামের একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাসুল (সা.) যখন মক্কার দিকে যাওয়ার ইচ্ছা সবাইকে জানিয়ে দিলেন তখন হাতেব বিন আবি বালতা একটি চিঠি লেখেন। যেখানে নবীজি (সা.)-এর সব পরিকল্পনা লেখা ছিল। তিনি সেই চিঠি এক নারীকে দেন এবং তাকে কথা দেন, সে যদি চিঠিটি নিরাপদে কুরাইশদেরকে পৌঁছে দিতে পারে, তবে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। ওই নারী চিঠিটি তার চুলের খোঁপার ভেতর লুকিয়ে রাখে এবং মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। নবীজি (সা.)-কে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হজরত আলী ও যুবাইর (রা.)-কে তার অনুসরণ করার জন্য পাঠান এবং বলেন, ‘তোমরা রওজাতুল খাখ (মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম)-এর কাছে গেলে সেখানে একজন মুসাফির মহিলা পাবে, যার কাছে কুরাইশদের বরাবর লিখিত একটি চিঠি আছে, সেটা নিয়ে আসবে।’ উভয়ে দ্রুত ঘোড়ায় চড়ে ছুটলেন এবং সেখানে পৌঁছলেন। একজন মুসাফির মহিলাকেও পেলেন। তারা তাকে উটের পিঠ থেকে নামতে বাধ্য করলেন এবং বললেন, তোমার কাছে কি কোনো চিঠি আছে? সে তার কাছে সংরক্ষিত চিঠির কথা সরাসরি অস্বীকার করল। তার কাছে যেসব জিনিসপাতি ছিল, সেগুলো তল্লাশি করেও কোনো চিঠির হদিস মিলল না। আলী (রা.) বললেন, ‘আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আল্লাহর রাসুলের কথা ভুল হতে পারে না, আর আমরাও কোনো মিথ্যা বলছি না। তোমাকে চিঠি বের করে দিতে হবে। নতুবা আমরা অবশ্যই তোমার পরনের কাপড় খুলে তল্লাশি করব।’ মুসাফির মহিলা বিকল্প পদ্ধতি না দেখে চিঠির কথা স্বীকার করল। সে তার চুলের খোঁপার ভেতর থেকে চিঠিটি বের করে দিল। চিঠি পেয়েই তারা উভয়ে রাসুল (সা.)-এর নিকট এসে হাজির হলেন এবং চিঠিটি সোপর্দ করলেন। সেটা খুলে দেখা গেল হাতেবের লিখিত চিঠি। যেখানে কুরাইশদের মক্কা অভিযানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নবীজি (সা.) হাতেবকে ডেকে পাঠালেন।

তিনি উপস্থিত হয়ে সবকিছু জেনে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বিশ^াস করি। আমি আমার ধর্ম যেমন পরিবর্তন করিনি, তেমনি আমার বিশ^স্ততাও বিকিয়ে দিইনি। কিন্তু কুরাইশদের সঙ্গে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন সম্পর্ক রয়েছে এসব মুহাজিরদের। এদের অনেকেরই কুরাইশদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, তাদের মক্কায় থাকা আত্মীয়তাসূত্রের লোকদের বিপদে কুরাইশরা আশ্রয় দেবে। কিন্তু আমার ব্যাপার ভিন্ন। আমার সেখানে কোনো আত্মীয় নেই, আছে কেবল মিত্রতা সম্পর্ক। অথচ সেখানে আমার পরিবারের লোকেরা রয়েছে, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। ফলে তাদের পারিবারিক কিংবা আত্মীয়তার সূত্রে আশ্রয় দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি ভেবে দেখলাম, আমার যখন এমন কেউ নেই, তখন আমি তাদের এমন কোনো উপকার করি, যার ফলে আমার পরিবারের লোকেরা যেন নিরাপদে থাকে।

হজরত ওমর (রা.) সেখানে ছিলেন। ঘটনা শুনে তিনি বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, এখনই আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে খেয়ানত করেছে। সে মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত। উত্তরে নবীজি (সা.) বললেন, না, সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আর ওমর! তুমি তো জানো, আল্লাহ তায়ালা বদরে অংশ গ্রহণকারী সাহাবিদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরা যা ইচ্ছা করো, আমি তোমাদের সব অন্যায়-অপরাধ ও ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছি’ (বুখারি : ৩০৮১)। এ কথা শুনে হজরত ওমরের চোখ অশ্রু প্লাবিত হলো। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল বেশি জানেন। নবীজি (সা.) হাতেব বিন আবি বালতা (রা.)-কে মাফ দিয়েছেন।

এরপর আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাজিল করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করো না, অথচ তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা তারা অস্বীকার করেছে এবং রাসুলকে ও তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে এ জন্য যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছো। তোমরা যদি আমার পথে সংগ্রামে ও আমার সন্তুষ্টির সন্ধানে বের হও (তা হলে কাফেরদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না) তোমরা গোপনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রকাশ করো অথচ তোমরা যা গোপন করো এবং যা প্রকাশ করো, তা আমি জানি। তোমাদের মধ্যে যে এমন করবে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে।’ (সুরা মুমতাহিনা : ১) (যাদুল মাআদ : ১/৪২০; সীরাতে ইবনে হিশাম : ২/৩৯৭; নবীয়ে রহমত, ৩৩১ পৃষ্ঠা অবলম্বনে)।

শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর-২, ঢাকা


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close