মেহেরপুরের গাংনীতে মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। এক দিনেই ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে ১৩ জনের ডেঙ্গু এনএস-১ পজিটিভ পান চিকিৎসকরা। গত দেড় মাসে ১১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সবাইকে সচেতন হবার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে হাসপাতালে আলাদা কোন ডেঙ্গু ওয়ার্ড না থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন অন্যান্য রোগীরা।
জানা গেছে, আবহাওয়া জনিত কারণে দেখা দিয়েছে সর্দি কাশি ও জ্বরের। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরে অবস্থা গুরুতর হলে তারা হাসপাতালে আসছেন। এখানে রক্ত পরীক্ষা করলেই মিলছে ডেঙ্গুর জীবাণু। গেল বছর জুলাই-আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭ জন। অপরদিকে চলতি বছরের গত দেড় মাসে সনাক্ত করা হয়েছে ১২৭ জন রোগী। এ মাসে আরও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিমুলতলা গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, বেশ কয়েকদিন হলো শরীরে জ্বর অনুভব করি। গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ার পরেও জ্বর কমেনি। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রক্ত পরীক্ষার করে ধরা পড়ে ডেঙ্গু জ্বর। অনেক মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে তিনি বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নেবেন বলে চলে যান।
ডেঙ্গু আক্রান্ত গাংনী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম জানান, গত কয়েকদিন যাবত জ্বর আসছে ছাড়ছে। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবনের পরও জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তখন ধরা পড়ে ডেঙ্গু। তিনি স্থানীয় হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন গোপাল নগরের মদিনা খাতুন (৫০), হিজলবাড়িয়ার রানা আহমেদ (১৭), গাংনীর রাশেদ হোসেন (২৫), তনন মিয়া (৩১), দুলু হোসেন (৩৫), তানিয়া খাতুন (২৩), মোহাম্মদ আলী (৪৫), সাহাবুল হক (৪০), লাবনী আক্তার (৩০), আসমাউল হুসনা (৬০) ও করিমন নেছা (৬০)।
রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জ্বর আসলে শরীর কেঁপে উঠে ও চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। হাত পায়ের গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। বমি বমি ভাব লক্ষ্যণীয়। খাবারে সম্পূর্ণ অরুচি। শরীরে কোন শক্তি পাওয়া যায় না।
তারা আরও জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীদের সাথে রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ রোগীরা রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। যারা অন্য রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন তাদের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালে সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে। হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত দেড় মাসে ১১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ১৩ জনের ডেঙ্গু এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, জায়গার অভাবে আলাদা কোন ওয়ার্ড নেই সেই সাথে লোকবল সংকটের কারণে একই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু রোগীদেরকে মশারি টাঙ্গিয়ে থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সময়ের আলো/আরআই