ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

উন্নয়ন সহযোগীরা সময় দেবে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:১৮ এএম  (ভিজিট : ২৪৬)
অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স এক মাস পার হলো। এই এক মাসের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে। বিশেষ করে প্রকল্পের আওতায় ঋণ কিংবা অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে সবকিছু আগের মতো থাকবে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন অনুসারে ঋণ বা অনুদান নেবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে আগের ঋণের সুদসহ পরিশোধ নিয়ে বেশ উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে এই নতুন সরকারকে। এমন অনেক প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়া হয়েছে যা জরুরি নয়। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ঋণের জাল বিছিয়ে রেখেছে। সেই ঋণ পরিশোধের দায়ভার এখন এই সরকারকে বহন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা ইতিমধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বৈঠক করেছি। সেখানে তাদের আগের ঋণের সুদসহ পরিশোধের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধের বিষয়ের চেয়ে সম্পর্কের উন্নয়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চীন, জাইকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ। একাধিক উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, আগের মতো তারা পাশে থাকবে। আগামীতেও থাকবে। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় প্রকল্পগুলো রিভিউ করার ব্যাপারে ইআরডি একবার যাচাই-বাছাই করতে চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের দায় আগের তুলনায় বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ এখন ঋণের পরিমাণ ৬৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। সরকারের জন্য বড় চিন্তা হচ্ছে, আসছে নতুন অর্থবছরে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে আগামী ২০২৬ সালের পর অনেক মেগা প্রকল্পের গ্রেস মেয়াদ শেষ হবে। সে সময় বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া এই সময়ের পর এমন কোনো প্রকল্প অবদান রাখবে না যার মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়বে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অন্য এক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যতটুকু না ঋণ পরিশোধ করতে হবে এর চেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে আগামী বছরগুলোতে। অর্থাৎ আগামী ২০২৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু হবে বড় ঋণের দায় পরিশোধ করার জন্য। তবে অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রস্তুতি রাখবে। যদিও এই ঋণ পরিশোধ করাটা সরকারের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের জন্য মানসিকতা তৈরি করা হচ্ছে। আর আগামীতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো রিটার্নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সম্প্রতি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলার সেক। একই সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিও সাক্ষাৎ করেছেন। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ নিয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। একইভাবে এডিবি প্রতিনিধি জানিয়েছে, তারা প্রয়োজনে অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

জানা গেছে, একক সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। যার পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সংস্থাটি অনুদানও দিয়েছে। যার পরিমাণ ১ দশমিক ৬২৩ বিলিয়ন ডলার। আর এডিবি বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত সহায়তা দিয়েছে ২২ দশমিক ৪২৪ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সংস্থার অনুদানের মাত্রা খুবই অল্প। যার পরিমাণ ৩২৮ বিলিয়ন ডলার। জাপান এ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ২০ দশমিক ৪৫২ বিলিয়ন ডলার। চীন সহায়তা দিয়েছে ৮ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া সহায়তা দিয়েছে ৬ দশমিক ৮৭৪ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডাও সহায়তা দিয়েছে। এ ছাড়া সহায়তার সারিতে রয়েছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি), আইডিবি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও সৌদি আরব। এদের সব মিলিয়ে সহায়তার পরিমাণ হবে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

সরকারের এখন উদ্বেগের বড় বিষয় হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ান ফেডারেশন সহায়তা করেছে ঋণ হিসেবে। যার পরিমাণ হচ্ছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার কথা আগামী ২০২৭ সালে। তবে সরকারের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আরও দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই ঋণ পরিশোধ করতে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছেন, ঋণ পরিশোধ করার জন্য সরকার প্রস্তুত। আর সেই সক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকসহ আরও উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে চায় বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজের সভাপতিত্বে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প নিয়ে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close