ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

৪৮ ঘণ্টা পর মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ
ভারত থেকে মায়ের জন্য শাড়ি আনা হলো না জয়ন্তের
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৩১ এএম  (ভিজিট : ১৫৪)
ভারত থেকে ফেরার সময় মায়ের জন্য নতুন শাড়ি আর বোনের জন্য নতুন জামা ও মাটির কৃষ্ণমূর্তি আনার কথা বলে বাবা মহাদেবের সঙ্গে বাসা থেকে বিদায় নিয়েছিল কিশোর জয়ন্ত। অথচ দুই দিন পরে সেই জয়ন্তই ফিরল মরদেহ হয়ে। এ কথাগুলো বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোর জয়ন্ত সিংহের মা জুয়িতা রানী। এ সময় তার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে গামছা দিয়ে মুছে দিচ্ছিলেন প্রতিবেশী সৃজন বালা। 

একই অবস্থা বোন ইস্মিতা রানীরও। উপজেলার লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও জয়ন্তর বড় বোন ইস্মিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। সে আমার স্কুলেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। বাবার সঙ্গে কদিনের জন্য ভারতে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে চলে যায়, আর ফিরল মরদেহ হয়ে। বাবাও রংপুরে হাসপাতালে।

গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশ বিজিবির পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিহত কিশোর জয়ন্তর মরদেহ ফেরত দেয় ভারত। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পুলিশ মরদেহ তার চাচা শ্রী বাবুল চন্দ্র সিংহের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের সময় ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর ইসলামপুর থানার ওসে হীরক বিশ্বাস, বিএসএফের ডিংগাপাড়া ১৫২ বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সন্তোষ সিং এবং বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বালিয়াডাঙ্গী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী ও বাংলাদেশ বিজিবির ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের ধনতলা বিওপির  কোম্পানি কমান্ডার মোজাম্মেল হক।

এর আগে গত সোমবার ভোরে জেলার ভারতের একশ গজ ভেতরে বিএসএফের গুলিতে গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় জয়ন্ত। জয়ন্তর নিথর দেহ টেনে আনতে গেলে গুলিবিদ্ধ হয় জয়ন্তর বাবা মহাদেব ও দরবার আলী। পরে তারা জয়ন্তকে ফেলে রেখেই পালিয়ে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। চোরাকারবারি চক্রের দালালসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে জয়ন্তর মরদেহ ডিংগাপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিএসএফ জোয়ানরা। গুলিবিদ্ধ জয়ন্তর বাবা মহাদেব কুমার সিংহ (৪৫) এবং দরবার আলী (২৮) চিকিৎসাধীন বলে জানা যায়।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, রাত ১টা ৩০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতীয় পুলিশ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করলে আমরা জয়ন্তের পরিবারের কাছে অর্থাৎ জয়ন্তর চাচা শ্রী বাবুল চন্দ্র সিংহের কাছে হস্তান্তর করি। ঠাকুরগাঁওয়ের  সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল লতিফ এবং লেখক ও কলামিস্ট আজমত রানা সীমান্ত হত্যা নিয়ে জানান, ফেলানীর হত্যাকাণ্ডটি আমাদের মনে আজও দাগ কাটে। সীমান্তে এই যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গুলি ঘট-এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমাদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মহল থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজির আহমদ জানান, বাংলাদেশ বিজিবির পক্ষ থেকে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতের বিএসএফকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। সীমান্তে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয়। আমরা ভারতের হাইকমিশন পর্যন্ত এর নিন্দা জানিয়েছি এবং পরবর্তী সময়ে সীমান্তে বিচারবহির্ভূত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে তাদের।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close