ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বেড়েছে পণ্য সরবরাহ, দাম ঊর্ধ্বমুখীই
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:২২ এএম  (ভিজিট : ১৭৬)
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় চাল, তেল, চিনিসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় মানভেদে বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। ভোজ্য তেলের দামও মণপ্রতি মানভেদে দাম বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি এখনও প্রতি কেজি পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। আর খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকারও বেশিতে। তবে আড়তদাররা দাবি করেছেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় খাতুনগঞ্জের আড়তে সরবরাহ বেড়েছে। ধীরে ধীরে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখি হবে। অন্যদিকে দাম বৃদ্ধির এই বৈরী সময়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নতুন চাঁদাবাজদের উৎপাত। সম্প্রতি চাঁদাবাজদের তৎপরতার প্রতিবাদে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক ঘণ্টা পাইকারি আড়ত বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ রয়েছে, পণ্যভর্তি ট্রাকপ্রতি ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বিএনপি সমর্থক চাঁদাবাজরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে একইভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থক চাঁদাবাজরা ট্রাকপ্রতি চাঁদা আদায় করত। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, চাঁদাবাজরা দলের নাম ভাঙানোর পদ্ধতিই গ্রহণ করেছে কেবল। নেপথ্যে পুরোনো চাঁদাবাজদের যোগসাজশই রয়ে গেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ভোগ্যপণ্য আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি হলেও আর বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। কারণ পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে। মিসর এবং পাকিস্তান থেকেও দেদার পেঁয়াজ আসছে। তাই এই মুহূর্তে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার কোনো সংকট নেই। পেঁয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে এখনও প্রতি কেজি ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে কেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যে হারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে আসছে তাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।

খাতুনগঞ্জে চাঁদাবাজদের নতুন করে উৎপাত শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা খাতুনগঞ্জ চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীরা মিলে মানববন্ধন-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি চাঁদাবাজদের তৎপরতা বন্ধ করতে।

খাতুনগঞ্জের চিনি ও ভোজ্য তেলের পাইকারি ব্যবসায়ী পিএন এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল হক রায়হান সময়ের আলোকে বলেন, ভোজ্য তেলের দাম এবং সরবরাহ এখনও স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে বলে মনে করছি। ভোজ্য তেলের দাম স্বাভাবিক রাখতে এস আলম গ্রুপের সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকা খুবই জরুরি। কোনো কারণে যদি এস আলমের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে তবে দাম অনেক বাড়বে।

তিনি বুধবারের মূল্য পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এস আলমের পাম অয়েল প্রতি মণ ৫ হাজার ১১০ টাকা ও সিটি গ্রুপের প্রতি মণ পাম অয়েল ৫ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। মেঘনা গ্রুপের প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হয় ৫ হাজার ১৫০ টাকায়। কয়েক দিন আগের তুলনায় বুধবারের দাম কমই বলা যায়।
এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে পাম অয়েলের দাম বেড়েছিল মণপ্রতি ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা। ওই সময় মণপ্রতি পাম অয়েল বেচাকেনা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ২২০ টাকায়। তখন সুপার পাম অয়েল প্রতি মণ ৫ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয়েছে মণপ্রতি ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানিতে জটিলতায় পড়েছেন। বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে ঋণপত্র বা এলসি খোলার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে পাইকারি বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে।

চট্টগ্রামের কাছাকাছি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সময় দুর্গতদের কাছে বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক হারে ত্রাণ সরবরাহ করে। আর এসব ত্রাণের বড় অংশ কেনা হয় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে। ফলে ব্যাপক হারে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে কিনে নেওয়া হয় চিড়া ও মুড়িসহ নানা ধরনের শুকনা খাদ্যপণ্য। এ সময় শূন্য হয়ে পড়ে এসব পণ্যের মজুদ।

তবে চিনি ও গমের দাম পাইকারিতে কিছুটা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বুধবার প্রতি মণ এস আলম ব্র্যান্ডের চিনি মিল গেটে বেচাকেনা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৪১০ টাকায়। আড়তে এসব চিনির দাম প্রতি মণে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।

চট্টগ্রামের বৃহত্তম চালের বাজার পাহাড়তলীর আড়তে সব ধরনের চালই মিলছে। তবে মানভেদে কিছু চালের দাম ছিল বেশি। কিছু চালের দাম স্থিতিশীল। বুধবার নুর জাহান ব্র্যান্ডের স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয় ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়। এ ছাড়াও ২৫ কেজির বস্তা নাজির শাইল চাল ১ হাজার ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯৬০, কাটারি পাইজাম ২৫ কেজির প্রতি বস্তা ১ হাজার ৭৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৯০, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট আতপ চাল মানভেদে ২ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ ও মিনিকেট সিদ্ধ প্রতি ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ৩৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪ শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান সময়ের আলোকে বলেন, চালের দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। কমেছে কিংবা বেড়েছে কোনোটি সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে আমি মনে করি, চালের দাম আর বাড়বে না। যেহেতু বন্যার প্রকোপ নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরবরাহ আসছে। তাই দাম মোটামুটি সহনীয় থাকবে বলেই মনে হয়।

চালের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, মোটা সিদ্ধ চালের চাহিদা দাম মাঝেমধ্যে বাড়লেও সবসময় কমই থাকে। কারণ এসব চালের ক্রেতা কম। চাহিদা বেশি থাকে এমন চালের দামই সারা বছর ওঠানামার মধ্যে থাকে।

তবে বণিক সমিতির বক্তব্যের সঙ্গে খুচরা চালের দামের পার্থক্য দেখা গেছে অনেক। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে খুচরা চাল বিক্রেতাদের দোকানে যায়, বিভিন্ন শ্রেণির চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। এর মধ্যে নাজিরশাইল মানভেদে ২৫ কেজির প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কাটারি পাইজাম ১ হাজার ৮০০ থেকে মানভেদে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাহাড়তলী বাজারের চেয়ে বহদ্দারহাটে প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।

বহদ্দারহাট রাজু স্টোরের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে আমরা কিনে এনে অনেকটা পাইকারি রেটে চাল বিক্রি করি। কিছু দামের পার্থক্য না থাকলে বা দাম বেশি না নিলে আমাদের তো ব্যবসা চলবে না। সব গ্রাহক পাহাড়তলী কিংবা চাক্তাইয়ের আড়তে গিয়ে চালের বস্তা কিনতে পারবে না। কারণ সেখান থেকে বাসা পর্যন্ত চালের বস্তা নিয়ে আসতে পরিবহন ব্যয় যোগ করতে হবে অনেক বেশি। তাই আড়ত থেকে কিছুটা টাকা বাড়তি দিয়ে আমাদের দোকান থেকে কিনলে আমাদেরও সুবিধা, ক্রেতারও সুবিধা। ক্রেতা খুব বেশি ঠকবেন বলে মনে হয় না।

অন্যদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নতুন করে ভিন্ন কৌশলে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। দেদার চাঁদা আদায় হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে। প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অনেক আড়তদার। গত ২৯ আগস্ট বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আড়ত বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেছেন। আয়োজন করেন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির।

ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের প্রতি চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আল্টিমেটামও দেন। তবে বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাকপ্রতি চাঁদাবাজি এখনও অব্যাহত আছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।


সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close