ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফের দলবাজিতে বিশৃঙ্খলা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৪১ এএম  (ভিজিট : ৬০৮)
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রশাসনে তৈরি হওয়া অস্থিরতা এক মাসেও কাটেনি। বিদায়ি সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’দের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়ার পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ‘শেখ হাসিনার সরকারের অনুগত’ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় আগের কোণঠাসা কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। তবে সাধারণ কর্মকর্তাদের অভিযোগ দলবাজদের সরিয়ে সেখানে পদায়ন পেতে একটি পক্ষ বঞ্চিত হওয়ার নামে ফের দলবাজি শুরু করায় প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে।

এ কারণে গত দুদিনে জেলা প্রশাসক হিসেবে ৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়ার একদিনের মধ্যেই ৮ জনের নিয়োগ স্থগিত করতে সরকারকে বাধ্য করা হয়েছে। বাকিদেরও ডিসি হিসেবে যোগদান না করে আগের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। ডিসি নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বঞ্চিত ছিলেন এমন ১৩১ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুগ্মসচিব পদে ২২৩ জন ও সিনিয়র সহকারী সচিব মর্যাদার ১১৭ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে উপসচিব করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির কারণে পদোন্নতি না পাওয়া একাধিক কর্মকর্তাও রয়েছেন যারা বৈষম্যের শিকার সেজে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। এই কর্মকর্তারাই এখন নতুন করে দলবাজি শুরু করেছেন ভালো পদায়নের জন্য। বিএনপি ও জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যাওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগও করছেন। গত সোম ও মঙ্গলবার দুদিনে দেশের ৫৯টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তালিকায় নাম না দেখে সচিবালয়ে হট্টগোল করেন ডিসি হতে না পারা একদল উপসচিব।

তাদের দাবি, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ‘সুবিধাভোগী’দের ডিসি করা হয়েছে। অথচ তারা শেখ হাসিনার সময়ে বঞ্চিত ছিলেন, এখনও বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবকে তাদের কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন। এ পরিস্থিতিতে বুধবার নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে থেকে আটজনকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চারজনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ডিসি হিসেবে নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে আগের কর্মস্থলেই কাজ করে যেতে বলা হয়েছে। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়াদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নতুন পদায়ন পাওয়া ডিসিদের বৈঠকে তাদেরকে একটি গাইড লাইন দেওয়ার কথা ছিল। তবে সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের হট্টগোলের কারণে সেটি স্থগিত করা হয়। এ কারণে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে নতুন এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বারবার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

লক্ষ্মীপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব সুফিয়া আক্তার রুমী, জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. সাইদুজ্জামান, কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারহানা ইসলাম, রাজশাহীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদার, শরীয়তপুরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব আবদুল আজিজ, দিনাজপুরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোবাশ্বেরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আরপিএটিসির উপপরিচালক মনোয়ারা বেগমকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের নিয়োগ বুধবার বাতিল করা হয়। এ ছাড়া আরও ৪ জেলার ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের ডিসি সাবেত আলী পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসি শরিফা হক টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসি নায়িরুজ্জামানকে নীলফামারীতে নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার দিনভর সচিবালয়ে হট্টগোল করার পর শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন ‘বঞ্চিত’ উপসচিবরা। বুধবারও সচিবালয়ে হট্টগোল করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নবনিযুক্তদের ৮ জনের নিয়োগ বাতিল করেন। একই সঙ্গে ডিসি নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট হট্টগোলের কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক পদে পদায়নপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নূরুল করিম ভূইয়া বলেন, যে ৫৯ ডিসিকে পদায়ন করা হয়েছিল তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আপত্তি রয়েছে। যেহেতু বিগত সরকারের সময় এসব কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন এবং আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছেন। তাই তাদের দাবি প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনে যারা সুবিধাভোগী, যারা ছাত্র-জনতা হত্যা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সেসব কর্তাকে বিদায় দিয়ে বঞ্চিত মেধাবীদের পদায়ন করতে হবে। তিনি জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দুটি বাতিল করার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসউর রহমান বলেন, একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ডিসিদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। বাছাই কমিটি পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৮ জনের নিয়োগ বাতিল করেছে। বাকিরা বহাল থাকবে। নিয়োগ বাতিল হওয়া এসব জেলায় নতুন করে যারা নিয়োগ পাবেন, তাদের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান তিনি। 

ডিসি নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট হট্টগোলের কারণ খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেছেন, ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি।

বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যারা উপসচিব যারা ডিসি হতে ইচ্ছুক, তালিকায় তাদের নাম ছিল, কিন্তু তারা হননি তারা বিশৃঙ্খলা করেছেন। তালিকায় নাম থাকলেই যদি তারা মনে করেন যে ডিসি হয়েছেন, এটা ঠিক নয়। যারা ডিসি হননি, তাদের তো পদাবনতি হয়নি, ইজ্জতহানি হয়নি। তিনি সেই পদের জন্য যোগ্য হতে পারেননি, অযোগ্য শব্দটা আমরা ব্যবহার করি না। তিনি বলেন, সব উপসচিব ডিসি হয় না। কারণ কম করে হলেও ১ হাজার উপসচিব রয়েছেন তার মধ্য থেকে মাত্র ৬৪ জন ডিসি হন। বর্তমান সরকার পাঁচজন বাদে ৫৯ জনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রেকর্ড আছে একজন ডিসিকে দ্বিতীয় দিনেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকজন সচিবের নেতৃত্বে হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেছে, টপ স্কোরার, বেস্টদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন বিতর্ক হয়েছে এরা খারাপ, এরা ভালো। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব কয়েকজনের পদায়ন বাতিল করেছেন। 

তিনি বলেন, একটা জেলার ডিসি মানে একটি মিনি বাংলাদেশের তিনি নেতা। বর্তমান সময়ে ১২০টা কমিটির সভাপতি তিনি। সুতরাং ডিসির অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়।


সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close