ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শিল্প এলাকা আরও উত্তপ্ত
কথা শুনছেন না শ্রমিকরা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০১ এএম  (ভিজিট : ১৮২)
কোনো কথাই শুনছেন না গার্মেন্ট শ্রমিকরা। বিভিন্ন দাবিতে দিনকে দিন তারা আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠছে।

বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর থানার চক্রবর্তী এলাকায় ‘বেক্সিমকো কারখানার’ শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে পাশের বিগবস নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে গাজীপুর, সাভার এবং আশুলিয়া এলাকার ১১৪ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক পক্ষ। বাকিগুলোতে শ্রমিকরা কাজ না করায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন গার্মেন্ট শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে দেওয়া হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিক যাতে ব্যাংক থেকে দ্রুত ঋণ পেতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

গাজীপুরে সড়ক অবরোধ : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষে বিক্ষোভের কারণে অন্তত ৩০টি কারখানায় ছুটি ও ৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আট শ্রমিক। শ্রমিকদের আন্দোলনে শরিক না হওয়ায় বিগবস নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলন থামাতে গিয়ে থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা শ্রমিকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পদক্ষেপই শ্রমিকদের নিবৃত করতে পারছে না। বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারাবো এলাকায় সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কিছু শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বেতনের দাবি করে আসছেন। গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের সারাবো এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরত শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বেতনের দাবিতে দুদিন ধরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আসছেন।

বুধবার সকালে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কয়েক হাজার উত্তেজিত শ্রমিক কালিয়াকৈরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেতন দেওয়ার কথা জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। ওইদিন কিছু শ্রমিকের বেতন দেওয়া হলেও বেশিরভাগ শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বেতন যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা, যা রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। একই দাবিতে বুধবার সকালে শ্রমিকরা কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

আড়ং ডেইরি কারখানার শ্রমিকরা জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, কর্মীদের বেতন সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা, ক্যাজুয়াল কর্মীদের মাতৃত্ব ভাতা ও ছুটি প্রদান, অ্যাডমিনের পদত্যাগ, বার্ষিক ছুটি প্রদানসহ ইত্যাদি। কারখানার শ্রমিক জুবায়ের আহমেদ বলেন, সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দাবি না মানা হলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।

সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড ও শ্রীপুরের যমুনা ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরাও বিভিন্ন দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন।

বিগবস কারখানায় আগুন : গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন ভবানীপুর এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন বিগবস করপোরেশন লিমিটেড নামে কারখানায় আগুন দিয়েছে বেক্সিমকো কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেক্সিমকো কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুর ১২টার দিকে বিগবস শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রেখে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। ওই কারখানার শ্রমিকরা বেক্সিমকো শ্রমিকদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় বিগবস কারখানায় হামলা চালান। এক পর্যায়ে তারা কারখানার ঝুট ও কেমিক্যাল গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই গুদামে আগুন জ্বলছিল।

বিগবস করপোরেশন লিমিটেড কারখানার কর্মকর্তা ওয়াহেদ খান বলেন, বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা আমাদের কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে শ্রমিকরা আমাদের কারখানার ওয়্যার হাউসে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে আমাদের মূল্যবান ফেব্রিক্স রয়েছে। এ ছাড়া এর আশপাশে বসতবাড়ির দোকানপাটও রয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বিগবস করপোরেশন নামে একটি কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা চলে আসে। পরে কাশিমপুর ও ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

টঙ্গীতে ৩ কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ : গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বিভিন্ন দাবিতে তিন কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভের কারণে পাশর্^বর্তী আরও তিনটি কারখানার কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। বিক্ষোভকালে বহিরাগত শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানা শ্রমিকদের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে স্থানীয় তিস্তারগেট এলাকার হক অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সহস্রাধিক শ্রমিক কারখানার সিইও আফতাব উদ্দিনের পদত্যাগ, বেতন বৃদ্ধি, বৈষম্য দূরীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে ওই শ্রমিকরা পাশর্^বর্তী মেঘনা রোডে গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেইজ লিমিটেড, ব্রাভো অ্যাপারেলস লিমিটেড ও পিনাকী গার্মেন্টসের সামনে জড়ো হয়ে কারখানা শ্রমিকদের নিচে নামতে হৈ-হুল্লোড় করে কারখানার গেটে ও জানালায় ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় শ্রমিকদের তোপের মুখে গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেইজ লিমিটেড, ব্রাভো অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা দুটি এক দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বলছে তারা বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সময়ই দিচ্ছে না। শ্রমিকরা বেতন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। আড়ং কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিকরা সময় দিচ্ছেন না। তারা বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভের কারণে জেলায় প্রায় ৩০টির মতো কারখানা বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কয়েকটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আশুলিয়ায় ২৫ কারখানা বন্ধ : আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অন্তত ২৫টি কারখানা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও অন্তত ৮টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।

বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ : শ্রম উপদেষ্টা : গাজীপুর-সাভারে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধের কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই সঙ্গে সাভার ও গাজীপুরে চলা শ্রম অসন্তোষের পেছনের প্রকৃত ঘটনা জানতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তিনি। শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকালের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। শ্রমিকদের সব ধরনের দাবি একটি জায়গার মাধ্যমে গ্রহণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকরা যেন একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো জানাতে পারে তার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত কেবিনেট বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতি রিভিউ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুনির্দিষ্ট করা হবে এবং তা সমাধান করা হবে। কমিটি সমস্যা বুঝে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতরের সঙ্গে কথা বলবে।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালককে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে একই অধিদফতরের সালিশি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের উপ-পরিচালককে। শ্রম অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলম ও উপপরিচালক মিতসু শাওলিন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের তিনজন আইনজীবীও কমিটিতে থাকবেন।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close