ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিতর্কে ঝুঁকি আছে ট্রাম্প-কমলা উভয়েরই
প্রকাশ: বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:৩৩ এএম  (ভিজিট : ১৮৮)
বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল ৭টায় (আমেরিকান সময় মঙ্গলবার রাত ৯টা) মুখোমুখি হবেন আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। এ দুই প্রার্থীর বিতর্ক দেখার জন্য উৎসুক মার্কিনিদের যেন আর তর সইছে না। এরই মধ্যে এই বিতর্ক ঘিরে নানা মত-অভিমত সামনে এসেছে। বিতর্কে কোন কোন বিষয় উভয় প্রার্থীর জন্য ঝুঁকির হবে তা উঠে এসেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক নিবন্ধে।

ট্রাম্প চুপ থাকার লোক নন, তিনি কড়া কথা বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। এর আগে ২০১৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে যাচ্ছেতাইভাবে সমালোচনা করেছিলেন তিনি। হিলারি একজন ‘অশ্লীল মহিলা’, তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো ‘চেহারা’ এবং ‘শক্তি’ কোনোটাই নেই এমন কথা বলতেও তিনি দ্বিধা করেননি। তাই ট্রাম্প এবং তার ডেমেক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্যকার প্রথম মুখোমুখি বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হতে পারে। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আট সপ্তাহ আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এই বাধ্যতামূলক বিতর্ক ঘিরেই এখন সরব মার্কিনিরা। 

ইতিমধ্যেই ট্রাম্প হ্যারিসের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী ও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে আসছেন। ট্রাম্পের দাবি-কমলা হ্যারিস হলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয়, যিনি সম্প্রতি ‘একজন কালো ব্যক্তি হওয়ার ভং ধরেছেন।’ এমনকি অনলাইন বার্তায় হ্যারিস নিজের ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যৌনতাকে ব্যবহার করেছেন বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প। হ্যারিসকে ট্রাম্প ‘দুর্বল’, ‘পাথরের মতো বোবা’ এবং ‘অলস’ বলেও অপমান করেছেন।

গত জুনে বাইডেন ও ট্রাম্পের বিতর্ক ৫ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ টিভিতে সরাসরি দেখেছিলেন। এবারও লাখ লাখ দর্শকের সামনে ট্রাম্পের এমন আক্রমণ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে হ্যারিসের প্রতিক্রিয়া উভয় প্রার্থীর জন্যই ঝুঁকি বয়ে আনবে। এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে আট পোলস্টারের সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং কৃষাঙ্গ অ্যাক্টিভিস্টদের কথাবার্তায়। 

ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রেসিডেন্সিয়াল পলিটিক্স বিশেষজ্ঞ জন গিয়ার মনে করেন, ট্রাম্পের এমন আক্রমণ-অপমান নারী, কৃষাঙ্গ ভোটার এবং মধ্যপন্থিসহ মূল ভোটার গোষ্ঠীগুলোকেই দূরে ঠেলে দিতে পারে। গিয়ার বলেন, ‘ট্রাম্পের এমন বাগাড়ম্বরে তারা (ভোটার) মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।’ যদিও রিপাবলিকান কৌঁসুলি ফোর্ড ও’কনেল মনে করেন, এমন আক্রমণের কারণে ট্রাম্পের সমর্থন কমেনি।

জিততে পারলে হ্যারিস হবেন প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং দক্ষিণ এশীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাই বিতর্কের দিন যে তাকে জটিল রাজনৈতিক গণনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। প্রচারণার সময় হ্যারিস যেমন ট্রাম্পের আক্রমণ-অপমানের সাফাই দিয়েই সময় পার করেছেন বিতর্কে তেমনটা করলে নিজের পক্ষে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন তিনি। আবার বিতর্কে জড়ালে ন্যায্য হোক বা না হোক হ্যারিস নিজের জাতি ও লিঙ্গকে শোষণ করছেন এমন অভিযোগে তাকে ধরাশায়ী করতে পারেন ট্রাম্প।

রাটগার্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন অ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণা পরিচালক কেলি ডিটমার বলেছেন, রাগান্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের স্টেরিওটাইপই হলো জোরদার প্রতিক্রিয়া দেখানো। যদি কমলা এমনটা করেন তা হলে কি তাকে রেস কার্ড, জেন্ডার কার্ড খেলার জন্য অভিযুক্ত করা হবে-প্রশ্ন রাখেন ডিটমার।

সাত সপ্তাহ আগে হুট করে নির্বাচনের মাঠে নামা হ্যারিসের সামনে ট্রাম্পের আক্রমণ সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে ভোটারদের সামনে তুলে ধরারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গত রোববার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজের প্রকাশিত একটি জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার বলেছেন যে তাদের হ্যারিস সম্পর্কে আরও তথ্যের প্রয়োজন। তার প্রচারাভিযান সূত্র জানিয়েছে, হ্যারিস ব্যক্তিগত বিষয় এড়িয়ে গিয়ে ট্রাম্পকে আরও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করার জন্য উসকে দিতে পারেন। সাবেক প্রসিকিউটর হ্যারিস ট্রাম্পের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে আরও স্পষ্টভাবে বার্তা দিতে সক্ষম হবেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। ২০২০ সালেও ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মাইক পেন্সকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

গত সোমবার প্রচারিত একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের কৌশলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। দ্য রিকি স্মাইলি মর্নিং শো’কে তিনি বলেন, ট্রাম্প হলেন পুরোনো এবং একঘেয়ে প্লেবুকের নাটকের মতো। তিনি কতটা নিচে নামবেন তার কোনো সীমা নেই। 

অন্যদিকে সোমবার এক ফোনকলে প্রাক্তন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান তুলসি গ্যাবার্ড যিনি বিতর্কের আগে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি বলেছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হ্যারিসের রেকর্ডের দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং বাইডেনের মতোই তার সঙ্গে তর্কে জড়াবেন। ট্রাম্প নারীদের সম্মান করেন এবং একজন পুরুষদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেন; নারীদের সঙ্গে তারচেয়ে ব্যতিক্রমভাবে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেন না। ট্রাম্প এর আগেও উপদেষ্টা এবং সহকর্মী রিপাবলিকানদের কথার সুর সংযত করার এবং এ বিষয়ে লেগে থাকার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আমাকে এটি আমার মতো করেই করতে হবে। 

তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হ্যারিসের বিরুদ্ধে নানা ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক রিসার্চ ফার্ম ব্লুপ্রিন্ট জুলাইয়ের শেষের দিকে হ্যারিসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক বার্তা পোল করেছে। সেখানে হ্যারিসের জাতি, লিঙ্গ বা পরিবারের ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমণ মানুষের মাঝে তেমন কোনো সাড়া ফেলেনি বলে জানিয়েছেন পোলস্টার স্মিথ। এমোরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও আফ্রিকান আমেরিকান রাজনীতির গবেষক আন্দ্রা গিলেস্পি বলেছেন, ট্রাম্পের কিছু কিছু আক্রমণ-যেমন হ্যারিসের কালোত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা-এতটাই স্বচ্ছভাবে মিথ্যা যে হ্যারিসের এ নিয়ে কিছু বলারই প্রয়োজন হয়নি। এটি এতটাই অবিশ্বাস্যভাবে আক্রোশজনক ছিল যে সবাই ‘এটি হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে, হ্যারিসকে কিছু বলতেই হয়নি।

তবে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক বিশেষজ্ঞ অ্যারন ক্যাল বলেছেন, ট্রাম্পকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। ট্রাম্প একজন দক্ষ বিতার্কিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তার তীক্ষè ও অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়ায় আগেই অনেক অভিজ্ঞ বিরোধীরা ধরাশায়ী হয়েছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে মূল কথা বলার জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পটু এবং ভোটাররা কি নিয়ে উদ্বিগ্ন তা নিয়ে বেশ ভালো ধারণা রাখেন।
প্রসঙ্গত, ৯০ মিনিটের বিতর্কটি ফিলাডেলফিয়ার ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। বিতর্কের সময় কোনো সরাসরি দর্শক থাকবেন না এবং এক প্রার্থীর বক্তব্যের সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে।




সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close