আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গত কয়েক দিনের শ্রমিক অসন্তোষ শেষে স্বস্তি ফিরেছে। এখানকার ৪৫টি কারখানা ছাড়া সব কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে আশুলিয়ার জিরাবো, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, সরকার মার্কেট, জামগড়া, বাইপাইল, পলাশবাড়ী, জিরানীসহ বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে দেখা গেছে।
এর আগে গত সোমবার বিকালে বিজিএমইএ ভবনে কারখানার মালিক, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট লোকজন এক সভা করে। সেখানে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। কিন্তু আশুলিয়া-ডিইপিজেড-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় শারমিন গ্রুপ ও হা-মীম গ্রুপের বড় দুইটি পোশাক কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। পরে আল-মুসলিম ও ডেকো গ্রুপসহ ৪৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিক কর্মবিরতিতে যান। এরপর কারখানাগুলোতে বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, গত সোমবার বিজিএমইএ-তে বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, হাজিরা-বোনাস বর্তমানে যা আছে তার থেকে আরও ২২৫ টাকা ও টিফিন ফি ১০ টাকা বাড়বে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য থাকবে না। সেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং শ্রমিকদের কোনো কালো তালিকা থাকলে সেটা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তে সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। কিন্তু তারপরও দুইটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। পরে আরও কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন বলে জানা যায়।
শিল্প পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল থেকে কারখানাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। প্রায় ৪৫টি কারখানায় শ্রমিকরা প্রবেশ করলেও কাজে যোগ না দিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সেসব কারখানা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। বাকি সব কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। যেসব কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন।
কোনো ধরনের সড়ক অবরোধ করেননি শ্রমিকরা। অতীতের চেয়ে গতকাল অনেকটাই শান্ত ছিল শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া।
এ ব্যাপারে আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ ১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সময়ের আলোকে বলেন, সকালে কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা এসেছেন। প্রায় সব কারখানায় কাজ চলছে। আর ৪৫টি কারখানায় দাবি-দাওয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিল না হওয়ায় এখনও তাদের কাজ শুরু করতে পারেনি। গতকালের চেয়ে এখন পর্যন্ত উৎপাদন ভালো অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাইরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ আমরা দিচ্ছি না। এখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, শিল্প পুলিশ ও জেলা পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। চতুর্দিকে মোবাইল প্যাট্রোল টিমগুলো চলমান আছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সক্রিয় রয়েছেন। কোনো ধরনের সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে এর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সময়ের আলো/আরএস/