ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তীব্র গরমে মুমিনের করণীয়
প্রকাশ: বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:৩২ এএম  (ভিজিট : ২২৪)
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। যেন দুনিয়ার বুকেই বইতে থাকে জাহান্নামের তপ্ত লু হাওয়া। হাদিসের ভাষ্য থেকেও জানা যায় গ্রীষ্মের এই তপ্ত আভা আসে জাহান্নামের নিশ্বাস থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো’ (বুখারি : ৩২৬০)। নিঃসন্দেহে এটা দুনিয়ার মানুষের জন্য অনেক কঠিন পরীক্ষা। এই রুক্ষ মুহূর্তে একজন মুসলমান এ বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয় যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে কী করতেন? এই সময়ের নির্দেশনাই বা তার কী? গরমের তীব্রতা এবং অসহনীয় প্রখরতার সময় রাসুল (সা.) কিছু কাজ নিজে করেছেন, কিছু বিষয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাঁর কয়েকটি নির্দেশনা এমন রয়েছে যেগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করলে তীব্র তাপ থেকে মুক্তি সম্ভব।

কাজের সময়ে পরিবর্তন
মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) সবসময় তাঁর উম্মতের কল্যাণ-চিন্তায় বিভোর থাকতেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধা, প্রয়োজন ইত্যাদি নিয়েই ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক ভাবনা। দুনিয়া কিংবা আখেরাত; কোনোটিই এ থেকে বাদ পড়ত না। মরু আরবে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে তিনি দেখতে পেলেন, তীব্র গরমে জোহরের নামাজে মুসল্লিদের কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য গূঢ় বিষয় উপলব্ধি করে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সময়ে কিছুটা পরিবর্তন এনে তিনি ঘোষণা করলেন-‘তোমরা জোহরের নামাজ ঠান্ডা করে পড়ো’ (বুখারি : ৫৩৮)। অর্থাৎ দুপুরের গরম কিছুটা হ্রাস পেলে জোহরের নামাজ আদায় করো। এ থেকে রাসুল (সা.)-এর দয়ার্দ্রতার বিষয়টি উপলব্ধি করার পাশাপাশি এই শিক্ষা ও প্রচ্ছন্ন নির্দেশ পাওয়া যায় যে, প্রচণ্ড গরমে কর্তাব্যক্তিদের এ বিষয়ে লক্ষ রাখা জরুরি-যেন অধীনস্থরা তীব্র গরমে অতিরিক্ত কষ্টে নিপতিত না হয়। তাই তাদের কর্তব্য হলো প্রখর তাপমাত্রায় কর্তব্যরতদের কাজের সময় কিছুটা পরিবর্তন ঘটানো কিংবা তাপ নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। যেন তীব্র তাপপ্রবাহে তাদের কাজ করতে কষ্ট না হয়। 

গোসল করা
সূর্যের প্রচণ্ড তাপ বর্ষণে আমাদের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরে, এর ওপর আবার পথ-ঘাটের ধুলোবালি মিশে উৎকট দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। শরীর হয়ে পড়ে নিস্তরঙ্গ ও দুর্বল। তা ছাড়া শরীর ঘেমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হলে আশপাশের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাই গরমের তীব্রতায় অতিরিক্ত ঘাম, শরীরের দুর্গন্ধ এবং অপরকে কষ্ট দেওয়া থেকে বাঁচতে গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন। আয়শা (রা.) বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা থেকেও জুমার নামাজের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর ধুলোবালির মধ্য দিয়ে আসার কারণে তারা ধুলো-মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরত। একদিন তাদের একজন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন। তখন নবী (সা.) আমার কাছে ছিলেন। তিনি তাকে বললেন, ‘যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে ও গোসল করতে’ (বুখারি : ৯০২)! এর মাধ্যমে তীব্র গরমের সময় গোসলের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়। 

মাথায় পানি দেওয়া 
সূর্যরশ্মির প্রচণ্ডতায় অতিষ্ঠ হলে তাৎক্ষণিক একটি প্রতিকার হলো মাথায় পানি দেওয়া। এর মাধ্যমে পুরো শরীরেই শীতলতা অনুভব করা যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও এই কাজটি করতেন। আর বলাই বাহুল্য, নবীজি (সা.)-এর কৃতকর্ম তাঁকে অনুসরণের নিয়তে করলে সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে, জনৈক সাহাবি বলেন, তিনি রাসুল (সা.)-কে গ্রীষ্মের দিনে প্রচণ্ড গরম আর পিপাসায় রোজা অবস্থায় মাথায় পানি দিতে দেখেছেন। (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬৯৯) 

জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা
দুনিয়ার জীবনে গরমের তীব্রতায় একজন মুমিনের মানসপটে উদিত হয় জাহান্নামের সেই প্রলয়ঙ্করী অগ্নি-শাস্তির কথা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, গরমের দিন আল্লাহ তাঁর শ্রবণ ও দৃষ্টিকে আসমানবাসী এবং পৃথিবীবাসীর দিকে নিবিষ্ট করেন। যখন বান্দা বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! আজকে কী প্রচণ্ড গরম! আল্লাহুম্মা আজিরনি মিন হাররি জাহান্নাম। হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের তীব্র তাপ থেকে মুক্তি দাও।’ আল্লাহ তায়ালা তখন জাহান্নামকে বলেন, ‘আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার থেকে মুক্তি চেয়েছে। আর আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মুক্তি দিলাম’ (বাইহাকি)। সুতরাং তীব্র গরমের এই সময়ে আমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া অব্যাহত রাখি, যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জাহান্নামের তীব্র সেই আজাব থেকে মুক্তি দান করেন। 

বৃষ্টি চেয়ে দোয়া ও ইস্তেগফার 
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে বাংলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে গেয়ে ওঠে ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই আল্লাহ মেঘ দে’। গরমের তীব্রতাকে বৃষ্টির বর্ষণই ভালোভাবে কাবু করতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহে তাই সবারই প্রাণের চাওয়া একপশলা বৃষ্টি। আল্লাহর রাসুল (সা.) গরমের তীব্রতায় অতিষ্ঠ উম্মতদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া-‘আল্লাহুম্মা আগিছনা’ (তিনবার) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন (বুখারি : ১০১৪)। পাশাপাশি ইস্তেগফার অব্যাহত রাখতে হবে। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। তোমরা তা করলে তিনি তোমাদের ওপর অজস্র ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (সুরা নূহ : ১০-১১)

গাছ লাগানো
গরমের প্রচণ্ডতা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে চাইলে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হলো বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ কাটা হচ্ছে যত্রতত্র এবং এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দেখা দিচ্ছে অসহ্য গরম। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের গাছ রোপণের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন নানাভাবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশসহ অন্যান্য অনেক নির্দেশ অমান্য করার অপরিহার্য পরিণতিতেই আমরা আজ নিপতিত। রাসুল (সা.) গাছ লাগানোর গুরুত্ব ও এর প্রতি উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যদি কেয়ামত হয়েই যায় আর এমতাবস্থায় তোমাদের কারও হাতে একটি চারা থাকে তবে সে যদি দণ্ডায়মান হওয়ার আগেই চারাটি রোপণ করতে পারে, তা হলে সে যেন তা রোপণ করে’ (সহিহুল জামে : ১৪২৪)। আমাদের জীবনে রাসুল (সা.)-এর সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই সব ধরনের দুরবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে; দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতেও। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও মানার তাওফিক দান করুন।


সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close