ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সরবরাহ কমিয়েছে আদানি, বেড়েছে লোডশেডিং
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:১১ এএম  (ভিজিট : ৬৭৮)
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি আদানি পাওয়ার। কোম্পানিটি আগে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো সরবরাহ করলেও গত ৫ আগস্ট থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট সরবরাহ করছে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে বেড়েছে লোডশেডিং। মফস্বলের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে গত তিন মাস ধরে বন্ধ থাকা সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি এখনও অপারেশনে না আসায় গ্যাসের ঘাটতি বেড়েছে। এ ছাড়া হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। এ জন্য লোডশেডিং হচ্ছে। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে সংকট কেটে যাবে।

জানা গেছে, ভারতের ঝাড়খণ্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গড্ডা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়বাবদ আদানির কাছে বাংলাদেশের বকেয়া পড়েছে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার। এ বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে তারা। এরপর থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানো হয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, আর্থিক চাপ সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশে বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোম্পানিটি বলেছে, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জানিয়েছি, পরিস্থিতি আর টেকসই পর্যায়ে নেই। কারণ আমরা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি, অন্যদিকে তেমনই আমাদের ঋণদাতা ও সরবরাহকারীদের কাছে দেওয়া অঙ্গীকারও রয়েছে।’

জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায়, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ বিলম্বিত হয়েছে।

পেট্রোবাংলা ও বিপিডিবি বলছে, ডলার সংকটের জন্য আদানির কিছু বিল বকেয়া রয়েছে। এটি দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু না জানিয়েই তারা প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায়। এ ছাড়া সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি দুই-তিন দিনের মধ্যে অপারেশনে এলেও এক সপ্তাহ সরবরাহ করার মতো এলএনজি মজুদ আছে। দ্রুত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে না পারলে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল চালু হলেও লাভ হবে না। আদানির সঙ্গে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি দ্রুত কেনারও চেষ্টাও অব্যাহত আছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে ঘাটতি বেড়েছে। প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সোমবার রাত ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। মফস্বলে এ লোডশেডিংয়ের সময় ৮ ঘণ্টার ওপরে।

পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৩০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৮২ কোটি ঘনফুট। গত সপ্তাহেও ৯০ কোটি ঘনফুটের আশপাশে সরবরাহ করা হচ্ছিল। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, গত তিন মাস ধরে সামিটে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। এ জন্য ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। আদানি কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এ জন্য লোডশেডিং হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, বন্যার জন্য অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়া এবং সব জায়গায় সরবরাহ লাইন ঠিক হয়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে, জ্বালানি ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারলে কোনো সমস্যা হতো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সময়ের আলোকে বলেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি আজকেই কমপ্লিট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে ৩ নম্বর সংকেত চলছে। এ জন্য সাগর উত্তাল থাকায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। এটি রেডি হয়ে গেছে। আরও দুয়েক দিন সময় লাগবে।

তিনি বলেন, পানির নিচের কাজ হয়ে গেছে। ওপরের কানেক্টিভিটির কাজ কিছু করলেই সরবরাহ শুরু করা যাবে। আমাদের যে পরিমাণ এলএনজি আছে তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ দিন চালানো যাবে। এরপরে স্পট মার্কেটের এলএনজি লাগবে। না হলে বসে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এখনও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার বিষয়ে নির্দেশনা পায়নি পেট্রোবাংলা। পিপিপির মাধ্যমে কিনতে সময় লাগবে। ওপেন টেন্ডার করলে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া থেকে কিনলে সাত দিনে পাওয়া যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিনলে ১০ দিন আর আমেরিকা থেকে আনলে ১৫ দিন লাগবে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close