ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সালমান-সাইফুলের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে বিএসইসি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:৩৩ এএম  (ভিজিট : ১৭৪)
বিগত দেড় দশকে দেশের পুঁজিবাজারে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শেয়ার কারসাজি করে অর্থ লোপাটেরও তথ্য বের হয়। শেয়ারবাজার কারসাজি ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ওঠে তিনি হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

এরপর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ ও কারসাজিতে যুক্ত হন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর এখন অন্তর্বর্তী সরকার সালমান এফ রহমান ও সাইফুল আলম পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একই সঙ্গে সালমান এফ রহমানসহ তার পরিবার অন্যান্য সদস্য ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। 

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক মো. মাহমুদুল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক (এফডি বিভাগ) মোহাম্মাদ আবুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক (এসআরআইসি বিভাগ) মো. নজরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এসএমএমআইডি) অমিত কুমার সাহা ও সহকারী পরিচালক (এলএসডি) তৌহিদুল ইসলাম সাদ্দাম।

বিএসইসির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ১৪ আগস্ট এস আলম গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমানের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সালমান এফ রহমান আশির দশক থেকেই শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে তার নাম এসেছিল। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম কাটায়। ২০১১ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, একসময়ের দেশের শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা। সংবাদে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে।

কমিশন ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের অন্য সদস্যসহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না এ বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দেয়।

এমতাবস্থায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৭ক এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এতদ্বারা নিম্নলিখিত চারজন কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে নানা সংস্কার-উদ্যোগ: এদিকে নতুন এ সরকারের নেতৃত্বে গত এক মাসে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। যা এখনও চলমান আছে। সেই সঙ্গে সেক্টরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তুলতে সংস্কারসহ মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষপদে রদবদল করা হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে সমন্বিত ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন এবং পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং আস্থা ফেরাতে সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা দ্রুত ফেরার পাশাপাশি অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close