ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গার্মেন্টসে অস্থিরতা আবার বাড়লো
*আশুলিয়ার ৯০কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা *টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ *পরিস্থিতি নিয়ে দিনভর বিজিএমইএ নেতাদের বৈঠক
প্রকাশ: সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:১২ পিএম  (ভিজিট : ৪৪৪)
গত দুই দিন-তিন দিনে গাজিপুর, আশুলিয়া ও সভার এলাকার গার্মেন্টস কারখানায় অস্থিতিশীলতা কিছুটা কমে আসলেও সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অস্থিরতা আবার বেড়ে গেছে। এ জন্য ওই এলাকার ৯০টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে সোমবার দিনভর উত্তরাস্থ বিজিএমইএ ভবনে বৈঠক করেন সংগঠনটির নেতারা এবং ওই অঞ্চলের কারখানা মালিকরা।

আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, ফের শ্রমিক অসন্তোষের মুখে আশুলিয়ায় প্রায় ৯০টা পোশাক কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বাকী কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়া-ডিইপিজেড-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম ও শারমিন নামে বড় দুইটি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে ওই এলাকার নিউ এইজ, নাসা, আল মুসলিম, জেনারেশন নেক্সটসহ প্রায় ৯০ পোশাক কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ ও কারখানা সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই এলাকার অনন্ত, শারমীন, হামীম, স্টারলিং গ্রুপসহ ৬৮টি কারখানাতে ছুটি বহাল ছিল। যেসব কারখানা খোলা ছিল তার মধ্যে ১৩টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া খোলা থাকলেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিশৃঙ্খলা করছে এমন কারখানার সংখ্যা অন্তত ৯টি। এগুলো হলো, মন্ডল নিটওয়্যার, ন্যাচারাল ডেনিম, নিট কম্পোজিট, রেডিয়েন্স জিনস, রেডিয়েন্স ফ্যাশন, গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ, ব্রেভো অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, টানা কয়েক দিন শ্রমিকরা কর্ম বিরতি কারনে কারখানার কৃর্তৃপক্ষা আশুলিয়ায় প্রায় ৯০টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি পোশাক কারখানার গেটে ছুটির নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও কয়েকটি পোশাক কারখানায় সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেছিলেন। পরে পর্যায়ক্রমে কারখানা ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে, রোববার সন্ধ্যায় জামগড়ার শিমুলতলা এলাকায় বেঙ্গল গ্রুপের ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে র‌্যাবের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধরা।

আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, সোমবার সকালে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসে। এরই জেরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত প্রায় ১০ দিন ধরে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির মুখে আশুলিয়ার পোশাক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিজিএমইএ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার সব পোশাক কারখানায় মালিক পক্ষ উপস্থিত থেকে কারখানা খোলা হলেও দুপুরের পরে বেড়ে যায় অস্থিরতা। এসব কারখানার মধ্যে প্রায় ৩০টি কারখানার শ্রমিকদের দাবি নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চলে।

টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবিতে গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেইজ ও ব্রাভো অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে। সোমবার সকাল আটটা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জয়দেবপুর-টঙ্গী সড়ক অবরোধ করে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, রোববারও আমরা আমাদের ১৩ দফা দাবি নিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আলোচনা হলেও দাবিগুলো মানা হয়নি। সোমবারও আমরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ পালন করছি। আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে কোন শ্রমিক কর্মচারী কাজে যোগ দেবো না।

শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো, প্রতি মাসের ৩-৭ তারিখের মধ্যে সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন প্রদান, হাজিরা বোনাস ১ হাজার টাকা, বেতন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, বাৎসরিক ১৮ দিনের ছুটির টাকা, সার্ভিস বিল, টিফিন বিল ৫০ টাকা, নাইট বিল ২০০ টাকা, ৬ মাসে ঈদ বোনাস, গর্ভবতী মেয়েদের জন্য ৪ মাসের ছুটির টাকা আগে প্রদান করে পুনরায় কাজে যোগদান, আন্দোলনকারী কোন শ্রমিক কর্মচারীকে চাকরি থেকে বহিষ্কার না করা, কোন শ্রমিকের সাথে খারাপ আচরণ না করা, উৎসবজনিত ছুটি ১২ দিন, কোন শ্রমিক বা স্টাফদের বের করে দেয়া হলে ৩ মাস ১৩ দিনের বেতন ও সার্ভিস বিল প্রদান ও ছুটির দিন কেউ কাজ করলে তাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

সরেজমিন জানা যায়, এ্যামট্রানেট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ ও ব্রাভো এপারেলস লিমিটেডের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক, স্টাফ ও কমর্চারী বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করে। সকাল আটটা থেকে দ্বিতীয় দিনের মত তারা টঙ্গী-জয়দেবপুর শাখা সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করে। সোমবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের স্বিদ্ধান্ত হয়। অন্য দাবিগুলো নিয়ে আজ মঙ্গলবার আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলে জানা গেছে। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা চলে যায়।

এদিকে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে টঙ্গী বাজারের বিপরীতে বাটা সু কোম্পানির শ্রমিকেরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন কারখানার সামনে বিক্ষোভ করে। চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পারিবারিক চিকিৎসা সুবিধাসহ আট দফা দাবি নিয়ে তারা বেশ কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে  মঙ্গলবার চুড়ান্ত আলোচনা হবে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close