ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কুড়িগ্রামে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন
প্রকাশ: সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৫২ পিএম  (ভিজিট : ৩৯৪)
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে কুড়িগ্রামে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ নিয়ে এমন নাজেহাল অবস্থাকে অনেকেই বলছেন কুড়িগ্রামের সঙ্গে এটা বৈষম্য।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকেরও কমে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গরম না কমলে সহসাই এই অবস্থার অবসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বীর বকেয়া থাকায় ভারতের আদানি গ্রুপ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে। ফলে সারা দেশেই বিদ্যুৎসংকট চলছে। আর রংপুরের ‘কনফিডেন্স পাওয়ার’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আইপিপি কোম্পানির প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে কুড়িগ্রামের মানুষ বেশি পরিমাণে লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

লাগামহীন লোডশেডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বসবাসরত বাসিন্দারা। এ ছাড়াও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালি কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন অনেক এলাকায় রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

এদিকে, টানা কয়েক দিনের অনাবৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে সেচব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশির ভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ তথা আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে গৃহিণীরাও বিরক্তি প্রকাশ করছেন। গরমে ঘরে অবস্থান করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চার্জার ফ্যান দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারছেন না তারা। পৌর শহরের কৃষ্ণপুর এলাকার গৃহিণী রোখসানা খাতুন বলেন, কারেন্টের অসহ্য যন্ত্রণায় পাগল হওয়ার অবস্থা হয়েছে। চার্জার ফ্যান চার্জ করার সময়ও পাওয়া যায় না।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ইন্টারনেট ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ব্যবসার গতি থেমে গেছে। বেশ কিছু কম্পিউটারও ইতিমধ্যেই বিকল হয়ে গেছে। কি যে করবো, উপায় পারছি না।

স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ৫ ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্ল্যান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় তারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫টি উপজেলার (সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগামেগাওয়াটওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৬। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

নেসকো'র কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, কখনও অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং চলছে।’ পরিস্থিতি উন্নতি হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে উৎপাদন-সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close