ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার কিমি সড়ক ও ১১০০ কালভার্ট
বন্যায় কৃষিসহ তিন খাতে ক্ষতি ৫৯১৪ কোটি টাকার বেশি
প্রকাশ: সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০২ এএম  (ভিজিট : ৩৯২)
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ২৩ জেলায় মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতের ক্ষতি ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৮ কোটি টাকাও বেশি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও ১ হাজার ১০১টি কালভার্ট। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। জানমালের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতের। এর পরেই রয়েছে সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বন্যা-পরবর্তী সময়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে মাঠে থাকা আমন ধান, ফসল, শাকসবজি, মাছের ঘের, গবাদিপশু ও পোল্ট্রির খামারগুলো ভেসে গেছে। এ ছাড়া বন্যার পানির সঙ্গে প্রচুর বালি ভেসে আসায় সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় নতুন করে চাষাবাদে সমস্যায় পড়তে পারেন কৃষকরা। তবে কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আউশ ও আমন ধান, শাকসবজি, আদা, পানসহ বিভিন্ন ফসলের ৯ লাখ ৮৬ হাজার ২১৪ টন উৎপাদন পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমনের আবাদ ও বীজতলার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা থেকে প্রায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার টন ধান পাওয়া যেত। এর বাইরে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ৬ হাজার টন আউশ ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে ২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯ জন। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় মৎস্য খাতের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দীঘি, খামারের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৯৯টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ ও চিংড়ির পরিমাণ ৯০ হাজার ৭৬৮ টন। এ ছাড়া দুধ, ডিম, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ এখন পর্যন্ত এ খাতে ৪১১ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি। বন্যায় ৪ হাজার পোল্ট্রি খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে ৫৬৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

বন্যার পর কৃষি পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নতুন করে আমন চাষে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষি পুনর্বাসন। এ কারণে ফসল নষ্ট হওয়া জমিগুলো দ্রুত চাষের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চারটি ক্যাটাগরিতে কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে কৃষি সচিব ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষকদের নিয়মিত প্রণোদনার পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় এরই মধ্যে রাজস্ব বাজেট থেকে প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ধানের বীজ, চারা, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে সেই অনুযায়ী পুনর্বাসনের জন্য আর কী কী কর্মসূচি নেওয়া যায় তা ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, আগামী মৌসুমে বোরো উৎপাদনে কোনো সমস্যা না হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংকট হবে না। তাই এখন তাদের টার্গেট আগামী বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদন করা। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। যাতে আমনের যেসব জমির চাষ নষ্ট হয়েছে, সেখানে পুনরায় আমন রোপণ করা যায়। এ ছাড়া শাকসবজিসহ অন্য জমিগুলোতেও চাষাবাদ ফিরিয়ে আনতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় মাছের পোনা বিতরণের জন্য তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের সহজ শর্তে ঋণ, মাছের খামার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাছচাষিদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৮ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক এবং ১ হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক ১০৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১২৪ কিলোমিটার, জেলা সড়ক ৫৩৪ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পানি পুরোপুরি না সরে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান জানান, বন্যার পানি পুরো নেমে গেলে আর্থিক ক্ষতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে। ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের পর মেরামত কাজ শুরু করা হবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close