ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

পঙ্গুত্ব বরণ করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা
প্রকাশ: রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:৩৪ এএম  (ভিজিট : ৬৫৮)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় সাবেক নেতাকে গণপিটুনি দিয়ে মেওে ফেলা হয়েছে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত একটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নিহত এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম আবদুল্লাহ আল মাসুদ। নিহত মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। তিনি রাবির মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। নগরীর বুধপাড়া এলাকায় থাকতেন তিনি।

এর আগে শনিবার বিকেলে বিনোদপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করে ছাত্র জনতা। এরপর তিন দফায় গণপিটুনি দিয়ে বোয়ালিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার শারীরীক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয় যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।’

ওসি বলেন, ‘গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। তার শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখন পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এতে মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে ছাত্রলীগের নেতারা।

এ হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। তার অন্য পা শনিবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয়। বোয়ালিয়া থানা হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদ বলেন, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’

মাসুদকে যখন আনা হয়, তখন বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। ৫ আগস্ট এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুই যুবককে ধরে থানায় এনেছিলেন তিনি। থানায় তিনিও মাসুদকে দেখেন।

মাসুদের মৃত্যুর খবর শুনে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা যে দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যেই আহত অবস্থায় একজনকে আনতে দেখলাম। কিন্তু কারা তাকে এনেছিল তা চিনতে পারিনি। পুলিশের এটা ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল।’

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ।

এদিকে, তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সহকর্মী ও একই মতাদর্শের রাজনৈতিক কর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রশ্ন রেখেছেন, প্লাস্টিকের পা ছাড়া যে ব্যক্তি চলতে পারে না, স্কুটি ছাড়া একস্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে না। তিনি কিভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাবেন? এমন হত্যার ঘটনার বিচাার দাবি করেছেন তারা।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close