ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আজ খুলবে না সব কারখানা
গার্মেন্টস খাতে আতঙ্ক এখনও কাটেনি
প্রকাশ: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৫৯ এএম  (ভিজিট : ২০০)
দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্পে আতঙ্ক যেন কাটছেই না। একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে নতুন অস্থিরতা। গাজীপুর, সাভার এবং আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিক্ষোভ, কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চলছে সমানতালে। বিগত কয়েক দিন শিল্প মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকের পর কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সংগঠন (বিজিএমইএ)। তবুও অস্থিরতা না থামায় আতঙ্ক কাটেনি শিল্প মালিকদের মনে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আজ শনিবার কারখানা খোলা হবে না বলে জানান গার্মেন্টস মালিকরা। 

সরকারের নিরাপত্তার আশ্বাসে গত বৃহস্পতিবার শতাধিক গার্মেন্টস খোলা রাখা হলেও বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুর আর লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলার কারণে কারখানা চালানো যায়নি। অনেক কারখানার কর্মকর্তাকে মারধর করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি আগুন দিয়ে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও হয়েছে কোথাও কোথাও। এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে মামলাও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আজ শনিবার থেকে কারখানা খুলবেন না বলে এক বৈঠকে জানিয়েছেন কারখানা মালিকরা। 

শিল্পের নিরাপত্তায় কারখানা মালিকরা পুলিশের পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব।

তিনি বলেন, কিছু কারখানায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা হলেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তা প্রতিহত করেন। অনেক বন্ধ কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এভাবে চললে কীভাবে হবে? অনেক মালিক বলেছেন, প্রয়োজনে ১০ দিন কারখানা বন্ধ থাকুক। কারণ কারখানা পুড়িয়ে দিলে তো আর ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না।
অন্যদিকে পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ১৪ জনকে আটক করা হয়। বিশেষ করে গাজীপুর, শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

শুক্রবার ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির পাশাপাশি পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ১৪ জনের মধ্যে তিনজনকে সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এসব বিশৃঙ্খলার সঙ্গে আটকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।

আশুলিয়া প্রতিনিধি রাকিব হাসান জিল্লু জানান, আশুলিয়ার পোশাক শিল্পের ধারাবাহিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে যৌথবাহিনী। সে ধারাবাহিকতায় অভিযান পরিচালনা করে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। 

শুক্রবার আটকের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ওসি মাসুদুর রহমান। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পলাশবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ জনকে আটক করা হয় ও তার আগে বিকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের ভাড়া করে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।

আটকরা হলেন আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মোখলেসুর রহমান (৬০) ও ফজলুল হকের ছেলে আবু হানিফ মিয়া (৪৭)। আবু হানিফ ঢাকা জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব। তদন্তের স্বার্থে বাকি ৬ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিন ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে একটি চক্র। যারা বিগত সরকারের আমলেও এই ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের ভাড়া করে তারাই পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। খোঁজখবর নিয়ে রাতে যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী থেকে দুজনকে আটক করে। বিকালে জামগড়া থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়। আটকদের রাতেই থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আশুলিয়া থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, নাশকতার জন্য অর্থের জোগানদাতা হিসেবে দুজনসহ নাশকতাকারী সন্দেহে আরও ৬ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। রাতে সবাইকেই আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পোশাক খাত অস্থিরতার অভিযোগ রয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান : এদিকে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, এরই মধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে অনেক দাবি। পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের সব যৌক্তিক দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিজিএমইএ। তাই শান্তিপূর্ণভাবে আজ শনিবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

শ্রমিকদের নানা দাবিতে কয়েক দিন ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে তৈরি পোশাক শিল্পে। উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকদের এই আন্দোলনে বিপাকে পড়েছেন শিল্প মালিক ও বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় শুক্রবার বিকালে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরের রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।


সময়ের আলো/আরএস/ 
 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close