ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানের ঘোষণা
দুই দিনেও ফল মেলেনি যৌথবাহিনীর অভিযান
সারাদেশের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য এখনো আসেনি, পেলে জানানো হবে : পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম  (ভিজিট : ২৫২)
লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা না হওয়ার পর বাতিল হওয়া ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ও পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে সারাদেশে যৌথবাহিনীর যে অভিযান শুরু হয়েছে তার ফল মেলেনি গত দুইদিনেও। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের কার্যক্রম শুরু হলেও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা জানাতে পারেনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। 

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি(মিডিয়া) মো. ইনামুল হক সাগর সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের কাছে ঢাকা থেকে সারাদেশে অভিযানের তথ্য এখনো এসে পৌঁছেনি। পাওয়া মাত্রই গণমাধ্যমে তথ্য জানানো হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে অস্ত্রধারী অপরাধীদের ধরা মুশকিল। অভিযানের গোপনীয়তা থাকতে হয়। যে এলাকায় যৌথঅভিযান চালানো হবে সেই এলাকার নাম প্রকাশ না করাই ভাল। তা নাহলে অপরাধীরা সেখান থেকে পালিয়ে যাবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সেও সূত্র জানায়, সারাদেশে যৌথবাহিনীর অভিযানে যাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে সেই তালিকায় প্রায় ১০ হাজার অপরাধীর নাম রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ও তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব অস্ত্রধারীরা শিক্ষার্থী ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, ওই সব অপরাধীদের ধরতেই এই অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পুলিশের আগের মতো যানবাহন নেই। প্রতিটা জেলায় নতুনভাবে বদলী হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা এখনো তাদের নিজস্ব সোর্স ঠিক করতে পারেনি। এমনকি ভূল তথ্যেও ভিত্তিতে অভিযানে গিয়েও হামলার শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ কনস্টেবল পর্যন্ত।

কয়েকটি জেলায় এখনো পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও আশুলিয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এসব কারণেই অভিযান এখনো ফলশ্রুত হয়নি। তবুও পুলিশ তাদের সার্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

ওই সূত্র জানায়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অস্ত্রধারী অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে যে কোনও মূল্যে।

অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৫ বছওে অর্থাৎ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে জমা হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ অস্ত্র। গত ৩ সেপ্টেম্বও লাইসেন্সকৃত ও লুটহওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭০ শতাংশ অস্ত্র জমা দেননি। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র জমা না দেওয়া সেগুলো অবৈধ অস্ত্র হিসেবে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। যার ফলে এখন কারও কাছে ২০০৯ সালের পরের লাইসেন্স করা অস্ত্র-গুলি পাওয়া গেলে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। এর মধ্যে যেসব অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি ও হামলার অভিযোগ রয়েছে, তালিকায় তাদেরও নাম আছে। অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশার লোকজন ও সাংবাদিক রয়েছেন। তালিকাটি ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে। তারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর এই তালিকায় রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোকজনকে গুলি চালিয়ে হত্যা মামলার আসামি, মাদক কারবারি, তালিকাভুক্ত দুর্নীতিবাজ, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য (এমপি), উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর ও পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিতর্কিত ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিগত সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী আমলাদের নাম। তালিকাটি নিয়ে প্রায় পনেরো দিন ধরে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্র জানায়, এখনো ২ হাজার ৬৬টি অস্ত্র ও ৩ লাখের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চায়নিজ রাইফেল, এসএমজি, পিস্তল, শটগান, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ও গ্যাসগান রয়েছে। ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২টি গুলি, বিভিন্ন ধরনের টিয়ার গ্যাস, গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড লুট হয়েছিল। তার মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি গুলি, প্রায় ৯ হাজার টিয়ার গ্যাস, আড়াই হাজার সাউন্ড গ্রেনেডসহ অন্যান্য গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। তার মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা। এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ৪ হাজার ৬৮৩টি, রিভলবার ২ হাজার ৪৩টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯টি, শটগান ৫ হাজার ৪৪৪টি, রাইফেল ১ হাজার ৭০৬টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৪ হাজার ৬টি। এসব অস্ত্রের ১০ হাজার ২১৫টি রয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে ৭ হাজার ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপির নেতাকর্মীর কাছে ২ হাজার ৫৮৭টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামে রয়েছে ৭৯টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের মধ্যে যারা জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close