ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

থানায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:০২ এএম আপডেট: ০৫.০৯.২০২৪ ৭:৫১ এএম  (ভিজিট : ২৮৭)
গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঢাকা মহানগর থানাগুলোতে পুলিশি কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। তার কয়েক দিন পর কার্যক্রম চালু হলেও সেভাবে নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে প্রায় এক মাস পর থানাগুলোতে আবারও ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। নিজেদের আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। থানায় বেড়েছে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি। ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রমে স্থবিরতার ফলে বেড়ে গেছে চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম। যেসব থানায় ভাঙচুরের পরিমাণ বেশি, সেগুলোতে অনলাইনভিত্তিক সেবা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা খিলক্ষেত, ভাটারা ও যাত্রাবাড়ী থানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি থানার সামনে ও ভেতরে থাকা যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। ৫ আগস্টের পর ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অস্থায়ীভাবে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেবামূলক কাজ চলছে। সব থানাতেই পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। কারণ দীর্ঘদিন পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেনি থানায়।

সরেজমিন ডিএমপির সব থানায় পুলিশি কার্যক্রম চলমান দেখা গেছে। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও ছিল কর্মতৎপরতা। জিডি ও মামলাসহ অপারেশনাল সব কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের। কয়েক দিন পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন কাজের চাপ বেশি বলেও জানান পুলিশ সদস্যরা।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের বেশিরভাগ সদস্যকেই থানায় অবস্থান করতে দেখা যায়। কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে তদন্ত কাজে। ওসি নিজেও একটি তদন্ত কাজে বের হয়েছেন বলে জানায় সেখানকার এক এসআই। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাড়িগুলো সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আগের মতো অপারেশনাল কাজে বের হওয়া যাচ্ছে না। সবাই কাজে যোগ দিলেও কাজের গতি কম।
গুলশান বিভাগের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত থানাটি হচ্ছে ভাটারা থানা। এই থানার কার্যক্রম থেমে নেই। 

গুলশান থানায় নতুন ভবনে চলছে ভাটারা থানার কার্যক্রম। তবে বাড্ডা থানার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এই থানাতেও ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। থানা ভবনের সংস্কার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ। বাকি কাজ আগামী এক সপ্তাহে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলশান থানার তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বনানী থানার কার্যক্রমও চলছে সমানতালে।

হাতে কিছু ফাইল ও কাগজপত্র নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি মডেল থানার ডিউটি অফিসারের রুমে বসে আছেন ৬৫ বছর বয়সি আছিয়া বেগম। তিনি কেন থানায় এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করতে এসেছি। সে আমার গায়ে হাত তুলেছে। যার কারণে চোখে আঘাত পাই। এতে করে আমার বাম চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখতে পাই। 

তার হাতে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মেডিকেল রিপোর্ট। প্রমাণ ছাড়া তো মামলা করা যাবে না। তাই সব কাগজপত্র নিয়ে এসেছি। তার কথা শুনে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য অভিযোগ লিখে নেন।

মলিন চেহারায় সাধারণ ডায়েরি করতে এসেছেন পল্লবী রায়। তিনি জানান, ধানমন্ডির ৯/এ থেকে তার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে গেছে। যেটিতে ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। তিনি ফেনী থেকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা আসেন কিন্তু মোবাইল চুরি হওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছেন। তবে থানায় আসার পর পুলিশ তার কথা শুনে জিডি নেন। তা ছাড়া তার মোবাইল ফিরিয়ে আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধানমন্ডি মডেল থানার এক এসআই সময়ের আলোকে বলেন, ধানমন্ডি থানায় কিছু ভাঙচুর হয়েছে, তবে সেগুলোকে সংস্কার করে পুরোদমে কাজ চলছে। মানুষ অভিযোগ নিয়ে এলে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কয়েক দিন আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করলেও এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষও আমাদের সাহায্য করছে। যার ফলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিএমপির আওতাধীন ৫০টি থানার সবকটিতে পুলিশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কয়েকটি থানায় বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণে সশরীরে কাজ না থাকলেও অনলাইনের মাধ্যমে নাগরিক সেবা চালু আছে। থানার বাইরে অপারেশনাল ও বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার কাজও করা হচ্ছে। পুলিশের নিরাপত্তার জন্য কিছু এলাকায় এখনও সেনাবাহিনী সাহায্য করে যাচ্ছে। মানুষ যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য ডিএমপি থেকে চলছে তদারকি।

রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসীন উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা আবারও সবকিছু নতুনভাবে শুরু করেছি। যদিও সরকার পদত্যাগের পর থেকে পুলিশের মধ্যে কিছু আতঙ্ক কাজ করেছে, তবে তা কেটে গেছে। আমি এই থানায় নতুন এসেছি। তবে যেদিন থেকে যোগ দিয়েছি তারপর থেকে সব ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছি। জিডির পাশাপাশি অপারেশনাল কার্যক্রমও চলছে। সাধারণ মানুষ যেকোনো সমস্যা নিয়ে এলে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। থানায় জিডি ও মামলাসহ সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারসহ জরুরি কাজে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রিয়াজুল হক সময়ের আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়লেও এখন পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এই বিভাগের পাঁচটি থানার মধ্যে চারটি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে খিলক্ষেত, ভাটারা ও বাড্ডা থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। এর মধ্যে তিনটি থানার অবকাঠামোগত সংস্কারের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। গাড়ি না থাকায় অপারেশনাল কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সব থানায় সেবামূলক কাজ করা হচ্ছে। মামলা বা জিডির ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। এসব কাজ ব্যাহত হচ্ছে না।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close