ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইসির বিদায় ঘণ্টা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:২১ এএম আপডেট: ০৫.০৯.২০২৪ ২:৫৪ এএম  (ভিজিট : ৩৩৭)
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানে। এরই ধারবাহিকতায় এবার বিদায়ের সুর বাজছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।

আজ দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। দিতে পারেন পদত্যাগের ঘোষণাও। ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শুরফুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করবেন নির্বাচন কমিশন। এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন আউয়াল কমিশন।

বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা পদত্যাগ কবে করবেন? জানতে চাইলে সিইসি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন। এ সময় তিনি বলেন, যা বলার বৃহস্পতিবার ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে সবকিছু জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কবে দেখা করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাব।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ ও কমিশন সংস্কারের দাবিতে বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘নাগরিক সমাজ’। বিগত ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজ ইসি সংস্কার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মোট পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ, ২০১৮ সালের কেএম নূরুল হুদা কমিশনের বিচার, ২০১৪ সালের কাজী রকিব কমিশনের বিচার, বিগত সরকারের ‘দালাল’ কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং দক্ষ, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এর আগেও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়ে কয়েকবার ঝটিকা বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন দফতরে রদবদল চলছে। সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, স্যার পদত্যাগের চিন্তাভাবনা করছেন। তাদের মধ্যে যাওয়ার আগে ব্রিফ করার পক্ষেও মতামত দিচ্ছেন।

এক নজরে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের ৩০ মাস : ২০২২ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই গেজেটে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। সে হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৩০ মাস দায়িত্ব পালন করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি নির্বাচন, জেলা ও উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন শেষ করেছে বর্তমান কমিশন। তবে সব নির্বাচনই ছিল প্রায় বির্তকিত ও ভোটারশূন্য।

দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতা, ইভিএমে ভোটগ্রহণসহ নানা চ্যালেঞ্জে মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর আস্থা অর্জনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন তারা। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ১৩ মার্চ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রযুক্তিবিদ, সাবেক সিইসি, সুুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও ২০২২ সালের ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে ইসি। তবে ইসির ডাকা সংলাপে সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে অনেকেই সরাসরি এ যন্ত্রের বিরোধিতা করেন। আবার কেউ কেউ শর্তসাপেক্ষে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে সব আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের ঘোষণা দেয় ইসি। এ জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটির টাকার একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছিল কমিশন। যা পরবর্তী সময়ে আর আলোর মুখ দেখেনি।

আউয়াল কমিশনের যত নির্বাচন : দায়িত্ব নিয়ে আউয়াল কমিশন ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল প্রথম বৈঠক করে। সেই বৈঠকে কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তারা। ২৫ এপ্রিল প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভোটের তফসিল দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথম পরীক্ষায় কুমিল্লা সিটির পাশাপাশি ১৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ, পাঁচটি পৌরসভা এবং চারটি উপজেলা পরিষদে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করার প্রত্যয় ছিল আউয়াল কমিশনের। কিন্তু কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ভোটে বাধা হয়ে দাঁড়ান সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার। কমিশন বাহারকে এলাকা ছাড়ার আলটিমেটাম দিলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইসি। পরবর্তী সময়ে ‘বাহার অস্বস্তি’ নিয়ে কুমিল্লা সিটির ভোট সম্পন্ন করে ইসি।

গাইবান্ধার উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা : আউয়াল কমিশনের সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচন ছিল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন। ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার মতো সাহসী উদ্যোগ নেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। প্রথমে নানা অনিয়মের কারণে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্তে পুরো নির্বাচনি এলাকার ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে নিজেদের সাহসী অবস্থান জানান দেয় কমিশন। পরবর্তী সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, এডিসি, পুলিশের কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ মোট ১৩৩ জনকে শাস্তির আওতায় আনতে সুপারিশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

আরপিও সংশোধন : কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডার (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছু সংশোধনী করেন। এ ছাড়াও ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিয়োগ ও পদোন্নতি এবং ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য আসনসহ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের শূন্যপদ, উপনির্বাচন ও সাধারণ নির্বাচনসহ ৩০৬টি নির্বাচন সম্পন্ন করে আউয়াল কমিশন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিল ইসি। এ সময় বিএনপিসহ ১৮টি দল ইসির ডাকা সংলাপে কোনো সাড়া দেয়নি। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ভোটগ্রহণ। বিতর্কিত সেই নির্বাচনকে অনেকে ‘ডামি’ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে। এ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে ছিলেন আরও ৪৩৬ জন প্রার্থী। এ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার দাবি করেছিল ইসি। তবে এ পারসেন্টেজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ছিল। সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফল অনুযায়ী ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এ ছাড়া ৬১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ও ১১টি আসনে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছিল। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।




সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close