ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ
যৌথবাহিনীর অভিযানের পরও স্বাভাবিক হয়নি শিল্প এলাকা
শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ ব্যবসায়ী নেতাদের
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম  (ভিজিট : ২৬০)
সোমবার দিবাগত রাত থেকে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি শিল্প এলাকায়। মঙ্গলবারও (৩ সেপ্টেম্বর) গাজিপুর, আশুলিয়া, টঙ্গী, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা সড়কে ও কারখানার ভিতরে বিক্ষোভ করে। তবে শিল্প এলাকার আশপাশের সড়কে সেনাবাহিনীর টহল থাকায় রাস্তায় নেমে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ বা বেশি অস্থিতিশীল করতে পারেনি। শিল্প মালিক ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শিল্প এলাকায় টহল দেয়। মোতায়েন রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। তবে মঙ্গলবারও নানা দাবিতে আশুলিয়ার মেংগুটেক্স, হান্ডাসহ কয়েকটি পোশাককারখানায় কর্মবিরতি চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় পোশাক কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন বিশৃঙ্খলার সংবাদ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো কোনো ঝামেলা কিংবা সড়ক অবরোধের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে বেশিরভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। সেগুলোতে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চলছে। তবে আশুলিয়ার নাসা গ্রুপ, আল-মুসলিমসহ চারটি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও কাজে যোগ না দিয়ে হইচই শুরু করেন। এসময় একটি কারখানার মালিকপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। এছাড়া কিছু কারখানায় শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ চললেও তা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। শিল্প পুলিশও বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি টহল অব্যাহত রেখেছে।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা যদিও সেভাবে এখনো যৌথ অভিযান শুরু করিনি, অভিযানের ঘোষণায় একটি বড় প্রভাব পড়েছে শিল্পাঞ্চলে। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অভিযানের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

গার্মেন্টস কারখানায় নৈরাজ্যর প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী পালন

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় নৈরাজ্য, বিশৃংখলা ও ভাংচুরের প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নগরীর টঙ্গী, গাছা ও চান্দনা চৌরাস্তার বিভিন্ন কারখানা এলাকায় তারা এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনির নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং  বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ কর্মীরা এসব অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নেন।

মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সকালে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকা ও লিলি ফুড মোড়ে টঙ্গী পূর্ব মেট্রো থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। এসময়  বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন, সাধারন সম্পাদক গাজী সালাহ উদ্দিন।

পরে গাছা থানা বিএনপির উদ্যোগে মালেকের বাড়ী এলাকায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গাছা থানা বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ  নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে গাজীপুর মহানগরের  চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়  বাসন থানা মেট্রো থানা বিএনপির উদ্যোগে পৃথক আরো একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ আহমেদ, থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ, সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, যুব নেতা সুমন পালোয়ানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসব অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন  কারখানার মালিক, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সাথে কর্মপরিবেশ নিয়ে কথা বলেন।

ধামরাই কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ ১৮ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। আন্দোলন চলাকালে লাঠিসোঁটাসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কারখানার বাইরে অবস্থান নেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবারও উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাত আড়াইটার দিকে কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে।

শ্রমিকরা জানান, কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয় না। তারা প্রাপ্য ছুটি কাটাতে পারেন না। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। অন্যদিকে অস্থায়ী ডিএমসি (দৈনিক, মাসিক ও ক্যাজুয়াল) শ্রমিকরা স্থায়ী হতে পারেন না ও তাদের বেতন ৮ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। তারাও নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এসবের জেরে কর্তৃপক্ষের কাছে ১৮ দফা দাবি জানিয়ে সম্প্রতি স্মারকলিপি দেন শ্রমিকরা। তবে দাবি মানতে নানা টালবাহানা করছিল কর্তৃপক্ষ। এরই জেরে সোমবার বিকেলের দিকে দিনের ডিউটি শেষে কারখানার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি দাওয়া তুলে ধরেন তারা। এরমধ্যে শ্রমিকদের বেতন ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার করার দাবি ছিল আন্দোলনকারীদের। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলতে থাকে। রাত আড়াইটার দিকে কর্তৃপক্ষ বেতন ১৪ হাজার করাসহ সব দাবি মেনে নেন। এরপর শ্রমিকরা তাদের বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন।

কেমিক্যাল সেকশনের এক শ্রমিক বলেন, বিকেল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত আন্দোলন করেছি আমরা। অবশেষে অফিসাররা দাবি মেনে নিয়েছেন। তাই আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

এদিকে শ্রমিকদের এ বিক্ষোভ চলাকালে সন্ধ্যার দিকে কারখানা ফটকের সামনে এসে অবস্থান নেন বিএনপির স্থানীয় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। এরমধ্যে সেখানে গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক, আজিজুল হক, ইমান আলী, আরিফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আন্দোলন চলাকালে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আন্দোলন এখন আর চলছে না।

শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা

এদিকে শিল্প কারখানার নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান তারা। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী নরসিংদীসহ শিল্প কারখানা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় হামলা ভাঙচুর এবং শতাধিক পোশাক কারখানাসহ সব ওষুধ কারখানা বন্ধ থাকার প্রেক্ষিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। শিল্প উদ্যোক্তাদের দাবি, কারখানায় নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রমিক বেশি নিয়োগ দেওয়াসহ অন্যান্য দাবিতে কিছু বহিরাগতরা ষড়যন্ত্রমূলক এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সাধারণ শ্রমিকরা এসব কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত নয়।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান। 

তিনি বলেন, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যারা হামলা করছে তারা কারখানার শ্রমিক নয়। এরা বহিরাগত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন তারা সরকারের সঙ্গে আছেন। গত কয়েক দিন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে। উপদেষ্টা আশ্বস্থ করেছেন এ ব্যাপারে যৌথবাহিনীর নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close