স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যার ফলে আমন ধান চাষাবাদের মৌসুম শেষ হয়ে এলেও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সর্বত্র আমনের চারার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চারার সংকটের কারণে এবার অনেক জমি অনাবাদি থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি উপজেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় আমনের বীজতলা নষ্ট এবং রোপিত আমন তলিয়ে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রাবণ ও ভাদ্র দুই মাস আমন চাষের মৌসুম। চলতি মৌসুমের শুরুতে শ্রাবণ মাসে তারা আমনের বীজতলা তৈরি করেন। কিন্তু কিছুদিন পর গত সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে এতে বেশির ভাগ বীজতলা ও রোপিত আমন চারা নষ্ট হয়ে হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শ্রাবণের শেষে রোপিত বীজতলাগুলোও তলিয়ে গিয়ে সংকট আরো প্রকট হয়। বর্তমানে উঁচু কিছু কিছু এলাকায় থাকা চারা অধিক মূলে কিনে কৃষকেরা চারার সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। তবে এখনো অনেক জমি পানিতে নিমজ্জিত। এসব অঞ্চলের চারা নষ্ট হয়েছে কিংবা পচে গেছে।
উত্তর রোসাংগিরী গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান (৩৪) বলেন, ‘দুই বার বীজতলা করে রাখতে পারিনি। এখন বীজতলা করে সেই চারা রোপণ করে কি লাভ। এখন চারা রোপণ করলে তাতে ধান হবেনা। বন্যা আমাদের সব শেষ কওে দিয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। সংকট মোকাবিলায় জমিতে কম করে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বিআর-২৯ ও ৩২ জাতের ধানের চারা লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে আমারা সব হারিয়েছি।’
শাহনগর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান (৪৬) বলেন, ‘কিনেও কোথাও চারা পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন চারা কিনে ধান গজালে সে ধান সময় না থাকায় রোপণ করলে আর হবে না। বন্যার কারণে আমাদের সবই শেষ।’
পূর্ব-সুয়াবিল গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ জাকারিয়া (৩২) জানান, ‘বন্যায় দুই বার বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে পাশের হাটহাজারী উপজেলার বাজার থেকে দেড় হাজার টাকার চারা কিনে এনেছি। দেখি কিছু হয় কি না।’
কৃষি কার্যালয় সূত্রজানায়, এ বছর উপজেলায় ২১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় বেশির ভাগ আমনের বীজতলা এবং রোপিত চারা পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে অধিকাংশ চারায় পচন ধরে। বর্তমানে মৌসুমের শেষ সময়ে নতুন করে বীজতলা করে তা রোপণেরও সময় নেই। এসব মিলিয়ে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সময়ের আলো/এএ/